স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব স্থগিত করল বিএনপি
২৪ মার্চ ২০২১ ১৭:৪৫
ঢাকা: দেশে করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত দলের সূবর্ণ জয়ন্তীর সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি। বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়ংক ও বিপদজনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। চলতি সাপ্তাহে করোনা সংক্রামণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের সংখ্যা ৩৫৫৪ জন যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা।”
‘দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি ও বিদেশী মেহমানদের স্বাগত জানানো ও অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে সংক্রামণের ঝুঁকি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধিতে জনমনে আতংক ও উতকণ্ঠা অগ্রাধিকার দিয়ে বিএনপির গৃহীত সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমাদের গৃহীত কর্মসূচিগুলো পুনঃরায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করা হবে’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের মধ্যে ২৫ মার্চ আলোচনা সভা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর র্যালী ও ৩০ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সুবর্ণজয়ন্তরীর সমাবেশ ছিল। এসব কর্মসূচির কোনোটিরই ‘এখনো’ অনুমতি পায়নি বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এজন্য আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত করোনার এই ভয়াবহতার কারণে আমরা মনে করছি যে, এই মুহুর্তে সমাবেশ-টমাবেশ বন্ধ করা দরকার। যেকারণে আমরা সব স্থগিত করছি।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি একটাই অনুরোধ থাকবে- সবাই মাস্ক পরবেন, সবাই নিরাপদ দূরত্বটা বজায় রাখবে এবং সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। আর অতিরিক্ত ভিড়ে গিয়ে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে আমার একজন সিনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে কথা হচ্ছি। উনি তো আমার উপরে রেগেই গেলেন একরম যে, এখনো কেনো আপনারা এই সমস্ত করছেন, এই মুহুর্তে বন্ধ করেন এগুলো। গোটা জাতি আজকে ঝুঁকির মধ্যে আছে। ভয়াবহ আক্রমণ করছে এই ভাইরাস।
‘তাই সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত করে করোনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং করোনা সংক্রামণ কম হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।
এ্ক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সরকারকে সব কর্মসূচি, সব অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলছি। সারা বিশ্ব করোনা সংক্রামণ মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কিছুদিন আগে আমি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম সবাই মাস্ক পরে, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। সেখানে কিন্তু এরকম প্রবণতাই নয় যে, তারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না। সেটা করতে তারা সক্ষম হয়েছে একটা ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে, এওয়ারনেন্স তৈরি করার মাধ্যমে। যেটা এখানে সরকার করতে পারেনি।’
ফখরুল বরেন, ‘প্রথম দিকে প্রচুর আর্মি-টার্মি নামিয়ে দেওয়া হল, তারপর সব তুলে নেওয়া হল। এখন এই যে, ভয়ংকর দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রমণ শুরু হয়েছে এই আক্রমণ মনে হচ্ছে যে, আগের মতো দূবর্ল না। আরও বেশি শক্তিশালী। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করছেন যে, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং সেখানে আইসিইউ না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
উল্লেখ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গত ১ মার্চ থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিএনপি। ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ, ৯ মার্চ মওলানা ভাসানীর কাগমারি সম্মেলন দিবসসহ এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান পালন করেছে তারা।
তবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিদেশি অতিথিদের অংশ গ্রহণে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনায় গত দুই সপ্তাহ ধরে বিএনপির কর্মসূচি স্থগিত ছিল।
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ