Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৮ মাসেই ১৬৮৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ মার্চ ২০২১ ১০:০৮

ঢাকা: ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটনে দারুণ সাফল্য দেখিয়ে চলেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটি মামলা ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মাধ্যমে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছেন। এর আগে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়েও এত বেশি ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন এই সংস্থাটি।

ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই সংস্থাটি মামলা করেছে ৬৬টি। এসব মামলায় ২৭০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একই সময়ে সংস্থাটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে ৯৬টি। এসব প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪১৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য মিলেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এই গোয়েন্দা সংস্থাটি আগের সব অর্থবছরের সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্রের তথ্য বলছে, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করে ২৪ কোটি টাকার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭৭ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর থেকেই ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে বিপুল পরিমাণে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর মোট ১ হাজার ৩২ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বের করে আনে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ আরও বেড়ে ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে অবশ্য মাত্র ৩৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করতে সমর্থ হয় সংস্থাটি।

এই হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের আগ পর্যন্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বের করে আনতে সক্ষম হয় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। সেখানে চলতি অর্থবছরের আট মাসেই এর পরিমাণ আগের রেকর্ডের চেয়েও ৩৩ কোটি টাকা বেশি। অধিদফতর আশা করছে, অর্থবছরের বাকি চার মাসেও তারা আরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বের করতে নিয়ে আসতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি তাদের অভিযানের আওতা বাড়িয়েছে। এর আগে কেবল ঢাকায় অভিযান চললেও এখন চট্টগ্রামেও চলছে অভিযান। বিভিন্ন বিপণি বিতান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিউটি পার্লার, পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট, সিগারেট উৎপাদন ও নকল ব্র্যান্ডরোল ব্যবহার, ব্যাংক, বিমা, রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল, বার, বিজ্ঞাপনি সংস্থায় তারা এসব অভিযান পরিচালনা করেছে।

চলতি অর্থবছরের এই আট মাসের মধ্যে বড় যেসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির তথ্য মিলেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— বান্দরবানের সাইরু রিসোর্ট, গুলশানের সিসা বার দ্য মিরাজ, রাজধানীর খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খান’স কিচেন, বড় বড় কয়েকটি ফার্নিচারের দোকান, কুরিয়ার প্ল্যাটফর্ম পেপারফ্লাই, তানাজ এন্টারপ্রাইজ, ইন্টেরিওর প্রতিষ্ঠান চারুতা, এরাম বার ও হোটেল, ওয়ান ব্যাংক, চট্টগ্রামের এসি বাজার লিমিটেড, অনলাইন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সহজ, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স, তানাজ এন্টারপ্রাইজ।

অধিদফতর বলছে, ভ্যাট গোয়েন্দাদের পরিচালিত অনেক অভিযানেই তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাট ফাঁকির সঠিক পরিমাণ জানা সম্ভব হয় না। কারণ সংস্থাটি বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির হিসাব বের করতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সময় এমনও দেখা যায় যে অভিযান চালানো প্রতিষ্ঠানের কোনো ভ্যাট নিবন্ধনই নেই। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন থাকলেও ভ্যাট দেওয়ার হিসাবে গরমিল রয়েছে। কেউ কেউ বিক্রির তথ্য গোপন করার মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি দেয়। কারও নথিপত্র যাচাই করে, আবার কারও নিরীক্ষা হিসাব মিলিয়ে তারপরই ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ বের করতে হয়।

এ বিষয়ে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, এনবিআরের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ভ্যাট গোয়েন্দার এই কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো সৎ ব্যাবসায়ীদের উৎসাহিত করা। ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে, ভ্যাট ফাঁকি রোধ ও আহরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এনে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা। এর মাধ্যমে যারা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন, এই অধিদফতরের তৎপরতায় তারা আইনের আওতায় আসছেন।

ড. মইনুল আরও বলেন, আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলছে, দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবসার ক্ষেত্রে ভ্যাট ফাঁকি লাভের চেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এখন ব্যবসার লেনদেন গোপন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আইন মেনে ব্যবসা করলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব এবং ব্র্যান্ড ইমেজও বাড়ানো যায়। ফলে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করার মাধ্যমে সরকারের প্রাপ্য ভ্যাটগুলো যেমন আনা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়ীদেরও সৎভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় উৎসাহ দেওয়া যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে না, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও এনবিআরের কাছ থেকে প্রাপ্য সুবিধাগুলো বুঝে নিতে পারবে।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর ভ্যাট ফাঁকি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর