গোবিন্দগঞ্জের বিস্ফোরণে জঙ্গি-নাশকতার সংশ্লিষ্টতা নেই: র্যাব
২৫ মার্চ ২০২১ ১৫:৫৮
ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গি বা নাশকতার পরিকল্পনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। যদিও শুরুতে একটি মহল এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘গতকাল বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেল চারটার দিকে গোবিন্দগঞ্জের মেকুরাই নয়াপাড়া গ্রামে কাসেম মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর র্যাবের গোয়েন্দা শাখা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে খায়রুজ্জামান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়।’
র্যাব তদন্তে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, এটি কোনোভাবে জঙ্গি হামলা ছিল না। ওই ঘটনায় মেকুরাই নয়াপাড়া গ্রামে কাসেম মিয়ার ছেলে বাড়ির মালিক বোরহান উদ্দিন, একই গ্রামের অহেদুল মিয়া ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিড়াডাঙ্গা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে রানা মিয়া নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে খায়রুজ্জামান নামে একজনকে র্যাব গ্রেফতার করেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
খায়রুজ্জামানের জবানবন্দি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ঘটনা সম্পর্কে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে বগুড়ার মোকামতলায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজের কেয়ারটেকার ছিলেন হাবিব। সেখানে মাটি খনন করতে গিয়ে মর্টার শেল উদ্ধার হয়। সেটি হাবিবের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যক্তি বোরহান ও খায়রুজ্জামান সংগ্রহ করে রোরহান উদ্দিনের বাসায় সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়া মোট পাঁচজন জানতেন।’
হাবিবের কাছ থেকে বোরহান উদ্দিনের সহযোগিতায় গত ২৩ মার্চ মোটরসাইকেলযোগে মর্টারশেলটি সংগ্রহ করে বোরহানের বাসায় রাখেন খায়রুজ্জামান। অহেদুল মিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস, স্বর্ণ মুদ্রা ও ম্যাগনেট জাতীয় জিনিস বিক্রি করতেন বলে এলাকায় পরিচিতি আছে। অহেদুলই জানিয়েছিল, ওই রকেট সদৃশ বা মর্টার শেলটি মূল্যবান হতে পারে।
আর নিহত রানা একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। তার কাছে এসব কাটাকাটি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। বোরহান উদ্দিন, খায়রুজ্জামান ও রানা গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে ধারালো সামগ্রী কিনে বোরহানের বাসায় যায়। কারিগরি জ্ঞান না থাকলেও তারা সেটি কাটাকাটি বা ব্যবচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করেন। এসময় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তিনজন নিহত হয়। হাবিব ও খায়রুজ্জামান পাশেই দূরে থাকায় বেঁচে যান।
সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে র্যাব নিশ্চিত হয়েছে, এটি কোনো জঙ্গি হামলা ছিল না। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তারা এটি করতে চেয়েছিল। অর্জিত লাভ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছে গ্রেফতার খায়রুজ্জামান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ আরও বলেন, ‘গ্রেফতার খায়রুজ্জামান ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে আইনগত প্রক্রিয়ায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হবে। ঘটনার আকর্ষিকতায় ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হলেও র্যাব মূল ঘটনা স্পষ্ট করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গোবিন্দগঞ্জে জঙ্গি হামলা বা নাশকতার কোনো আগাম তথ্য ছিল না। আর এটি কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই মর্টার শেল মাটির নিচে ছিল। কোন দেশ তৈরি করেছিল, কেমন ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল তা জানার চেষ্টা করতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/এমও