৫০ বছর পরও বলতে পারি না ‘আমরা স্বাধীন’— ফখরুল
২৬ মার্চ ২০২১ ১৬:১২
ঢাকা: “১৯৭১ সালে খালেদা জিয়া পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ৫০ বছর পর এসে বাংলাদেশের ‘অবৈধ’ সরকারের হাতে তিনি বন্দি। আমাদের গণতন্ত্র ও রাজনীতির অর্জন হচ্ছে এটা— ৫০ বছর পরও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। ৫০ বছর পরও বলতে পারি না— ‘আমরা স্বাধীন’। আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২৬ মার্চ। এই দিনে আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধিতে এসেছি তার মাজার জিয়ারত করতে, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেই সময় যেসব মা-বোনেরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ ঢাকা শহরের যে অবস্থা, এটা আমাদের কারও কাছে প্রত্যাশিত নয়। আজকে ঢাকা শহরে অঘোষিত কারফিউ চলছে। জনগণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণকে বাদ দিয়েই সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। আমাদের বিস্তারিত কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচি আমরা পালন করতে পারছি না। আমরা স্মৃতিসৌধে যেতে পারিনি। আমাদের ঢাকা জেলার নেতারা সেখানে প্রতিনিধিত্ব করছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই ৫০ বছর পর আমরা অত্যান্ত আবেগতাড়িত ও আপ্লুত। কারণ, সবাই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলাম। ৫০ বছর পর বাংলাদেশের এই চেহারা দেখতে হবে, এটা আমরা কল্পনা করি নাই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই আহ্বান জানাতে চাই, সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখা, তাকে সুসংহত করা এবং গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে আত্মত্যাগ করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের কর্মসূচি আমরা বাতিল করেছি। কারণ, আজ ভয়ংকরভাবে করোনা আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। তারা বিদেশি মেহমান নিয়ে ব্যস্ত আছে। দেশের মানুষের কী হবে কী হবে না, সেটা নিয়ে বেশি আগ্রহ তাদের নেই।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু দেশ, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তারা আমাদের সহযোগিতা করছিলেন, সে ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বন্ধু দেশের সঙ্গে অমীমাংসিত যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো সমাধান হয়নি। আমাদের কোটি মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্ন যেটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, সেটা হলো পানির হিস্যা, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা। সেখানেও কোনো সমাধান নেই। বার বার করে বলা হয়েছে তিস্তা নদীর পানির হিস্যা। ১০ বছর আগে বলা হয়েছে, তারা সমাধান করেনি।’
“অথচ আমাদের সরকার একতরফাভাবে ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। গোটা বিশ্বে এ রকম কোনো নজির আছে বলে আমার জানা নেই। কিছুদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন, তিনি বললেন— ‘নো ক্রাইম, নো ডেথ’। ক্রাইম যে হচ্ছে, তার একটা ট্রায়াল হবে। ট্রায়ালে কেউ দোষী হলে শাস্তির বিধান আছে। আমাদের যে কানেক্টিভিটি হচ্ছে, আমরা আনন্দিত। কিন্তু এই কানেক্টিভিটিতে আমাদের লাভটা কী? এ বিষয়টি কিন্তু এখন পর্যন্ত জনগণকে জানানো হয়নি। আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু কেউ আমাদের প্রভু হবে, এটা আমরা চাই না,”— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, প্রেসউইংয়ের দুই সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতা দিবস ২০২১ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী