স্বাধীনতার ৫০ বছর: চট্টগ্রামে শ্রদ্ধায় স্মরণ মুক্তিসংগ্রামীদের
২৬ মার্চ ২০২১ ১৬:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধিকারের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার সূচনালগ্নের ইতিহাসে জড়িয়ে থাকা চট্টগ্রাম বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে মুক্তিসংগ্রামীদের। ৫০ বছর আগে যারা বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন, যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে, ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা— আবেগমাখা এই দিন চট্টগ্রামে উদযাপন হচ্ছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়।
কোভিড সংক্রমণের কারণে আয়োজনে কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রাণোচ্ছ্বাসের ঘাটতি নেই। শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, বধ্যভূমিতে গিয়ে হারানো স্বজনদের স্মরণ, কুচকাওয়াজ, সভা-সমাবেশসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে উদযাপন করা হচ্ছে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
পুলিশের সশস্ত্র অভিবাদনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভোর ৬টায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দুই প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম এবং কয়েকজন কাউন্সিলরকে নিয়ে প্রথমে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারাও শহিদ মিনারে ফুল দেন।
এরপর চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফুল দেন। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষও শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগেসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি বিপ্লব উদ্যানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নগরীর হাজারী লেইনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় পতাকা মিছিল বের করে। যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা, বোধনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ, ন্যাপসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর টাইগারপাসে কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার ডিসপ্লে হয়নি। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বয়েজ স্কাউট, গার্লস গাইড ও বিএনসিসি’র সদস্যরা অংশ নেন। প্রধান অতিথি হিসাবে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ। এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ইসমাইল খান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এই অঞ্চলের মানুষকে বর্বর পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্ত করা। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে উজ্জীবিত করেন। স্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপরেখা দেন। এর ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন হতো না।’
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। আলোচনা করেন বিআইটিআইডি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (অর্থ) মাসুদুর রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডা. দেলোয়ার হোসেন, বিআইটিআইডি’র উপপরিচালক ডা. বখতিয়ার আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার শাহাদাত হোসেন ও এ বি এম মাসুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ।
বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নগরীর জিইসি মোড়ের ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে। শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর আয়োজিত আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, ‘শত শত বছর বাংলাকে অনেক শাসক শাসন করেছে। তারা শাসক হিসেবে কখনো স্বাধীন, কখনো পরাধীন ছিল। কিন্তু বাঙালিরা কখনো স্বাধীন ছিল না। এমনকি তাদের মুখের ভাষা বাংলাও কখনো সরকারি দফতরের ভাষা ছিল না। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটলে বাঙালিরা মনে করেছিল, তারা স্বাধীন হলো। কিন্তু অচিরেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করার ষড়যন্ত্র শুরু হলে, বাঙালি উপলব্ধি করল, আসলে তারা নতুন করে পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে পরাধীন হয়েছে। তারপর শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেছিলেন বাঙালির অধিকার আদায়ের কঠোর সংগ্রাম। ১৯৬৬ সালে তিনি ঘোষণা করেন ছয় দফা। তিনি এই ছয় দফা ঘোষণা না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার এ কে এম তফজল হক, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহীত উল আলম, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন তৌফিক সাঈদ, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের সহকারী ডিন এম মঈনুল হক, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর