Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়তে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ মার্চ ২০২১ ২০:১৭

ঢাকা: একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি, তাহলেই আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।’

শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে শেষের দিন ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এতে সম্মানিত অতিথি হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তব্য রাখেন। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো উন্মোচন করা হয়।

এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০২০’ পুরস্কার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।

বক্তব্যে প্রতিবেশি বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসাবে করোনভাইরাসের টিকা দেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এর পূর্বে তিনি আমাদের করোনাভাইরাসের টিকা উপহার দিয়েছিলেন এবং এবারও উপহার দিচ্ছেন।’

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০বছর উপলক্ষ্যে উভয় দেশ বেশ কিছু যৌথ কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে কথাও স্মরণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতি পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করাসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ সকল শহীদদের প্রতি কথা স্মরণ করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতাকে হারিয়ে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশকে আদর্শ বিচ্যুত করেছিল। আমরা শুধু এইটুকু বলতে পারি যে আদর্শহীন কোনো জাতি কখনও কোনো অর্জন করতে পারে না।’

‘ভারত সুখে-দুঃখে কিন্তু সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে। সব থেকে বড় কথা, বাংলাদেশের বিষয়ে যেটা আমি নিজে লক্ষ্য করেছি, ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, দল-মত নির্বিশেষে ভারতের জনগণ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়, সেটি হলো বাংলাদেশের কোনো বিষয় হলে। তারা সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকে। কাজেই ভারত শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রই নয়। ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত এবং ভৌগোলিক সেতুবন্ধন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে ভারত সরকার এবং সে দেশের জনগণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

যুদ্ধদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা সারাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, লুটপাট করে; এর ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সেই শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। খাদ্য দিয়েছে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, তাদের অস্ত্র দেওয়া এবং তাদের সব ধরনের সহযোগিতা ভারত সরকার করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই যুদ্ধে ভারতের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য, যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল এবং তারাও তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী তাদের অবদানের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের যে আত্মত্যাগ, সাহায্য সহযোগিতা তা কখনো ভুলবার নয়। আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে সে অবদানের কথা স্মরণ করি।’

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ প্রধানমন্ত্রীর

এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও ভারতের জনগণ এবং ভারতের সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন আমার পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা আমাদের ছোট দুইটি বাচ্চা সায়মা এবং জয়কে নিয়ে জার্মানিতে ছিলাম আমার স্বামীর কর্মস্থলে। বিদেশে ছিলাম বলেই হয়ত তখন বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার পর আমরা যখন দিশেহারা হয়ে যাই, আমরা কোথায় যাব? কারণ আমরা গিয়েছিলাম মাত্র অল্প কয়েকদিনের জন্য। আর আমার স্বামী নিউক্লিয়ার সাইয়েনটিস্ট। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন গবেষণার জন্য। কাজেই সেখানে থাকার মতো আমাদের তেমন কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। তখন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী এবং যুগোশ্লোভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো তিনি আমাদের খবর দেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থায় আমরা তার আশ্রয়ে চলে এসেছিলাম দিল্লিতে, সেখানেই আমরা দীর্ঘদিন ছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে ফিরে আসতে দেয়নি। আমাদের দেশে যে মিলিটারি ডিটেকটর ছিল, সে আমাদের দেশে ফিরে আসতে তো দেয়নি। এমনকি জিয়াউর রহমান তখন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেই পাসপোর্টটাও কিন্তু রেহানাকে দেয়নি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। কারণ ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে তখন আমি একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসি। এমন একটা অবস্থায় আসি যখন আমার বাবার খুনিরা, যুদ্ধাপরাধীরা; যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমার বাবা শুরু করেছিলেন, তারা সবাই মুক্ত এবং তারাই ক্ষমতায়। তার ওপর মিলিটারি ডিটেকটর। ওই অবস্থায় দেশে আমরা আসি। ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। আমরা সরকার গঠন করে উদ্যোগ নেই, যে বন্ধুপ্রতিম দেশ যারা আমাদের সহযোগিতা করেছে, তাদের আমরা সম্মাননা দেব।’

‘তবে সেই কাজ প্রথমবার আমরা করতে পারিনি। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন আমরা আমাদের সব বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র দেশ এবং মানুষকে সম্মাননা দিয়েছিলাম। কারণ আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্মরূপ ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতার সম্মাননা, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননাসহ ভারতের ২২৫জন নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করেছি। এই সম্মাননা আমরা তাদের দিয়ে নিজেদেরকে ধন্য মনে করি’, বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদীজীর ‘প্রতিবেশি সর্বাগ্রে’ এই নীতির প্রশংসা করি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলিতে তিনি করোনাভাইরাসের টিকা উপহার স্বরুপ পাঠিয়েছেন- এর মাধ্যমে মোদীজীর এই নীতিটারেই প্রতিফলন ঘটেছে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ।”

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলি এখন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং চট্টগ্রাম বিমান বন্দরও ব্যবহার করতে পারেন এবং ব্যবহার তারা করছেন। সেই সাথে তারা মোংলা বন্দরও ব্যবহার করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন অর্থনৈতিক মুক্তির। এজন্য পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা এবং সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার ওপর তিনি জোর দিতেন। ভারত এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশ। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’ আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড টপ নিউজ নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবস ২০২১ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর