হাটহাজারীর পরিস্থিতি ‘শান্ত’ হেফাজতের সঙ্গে বৈঠকে এমপি আনিসুল
২৬ মার্চ ২০২১ ২২:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো : পুলিশের সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর অবস্থা এখন শান্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে মাদরাসার ছাত্ররা রাস্তা কেটে দেওয়ায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে এখনও যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাটহাজারীর সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মাদরাসায় হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে কিছুটা আতঙ্ক আছে। মাদরাসার সামনে রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। সেজন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ স্যার হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।’
শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলায় দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার একদল ছাত্র, যারা হেফাজতের কর্মী হিসেবে পরিচিত, তারা মিছিল বের করে। বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তারা হাটহাজারী থানার সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা থানায় ভাঙচুর করে। স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও সরকারি ডাকবাংলোর ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালান।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুড়লে মাদরাসার ছাত্ররা পিছু হটে। এরপর তারা মাদরাসার মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এদিকে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ১১ জনকে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের নিবন্ধন বই অনুযায়ী তারা হলেন রবিউল ইসলাম, মিরাজুল ইসলাম, নাসিরুল্লাহ ও মিজানুর রহমান। এর মধ্যে তিনজন হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র। আরেকজন পেশায় দর্জি এবং হেফাজত কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর ছাত্ররা রাত পর্যন্ত মাদরাসার গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন। অন্যদিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে পুরো এলাকাজুড়ে।
এদিকে হতাহতদের দেখতে বিকেলে হাসপাতালে আসেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হারুন ইজাহার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জান্নাতুল ইসলামও হাসপাতালে যান।
এ সময় আজিজুল হক ইসলামাবাদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কিছু ছাত্র একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেছিল। তাতে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে পুলিশ সদস্য। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি, সঠিক বিচার চাই।’
হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের থানায় হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মাদরাসার ছাত্রদের অভিযুক্ত করার জন্য সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমাদের ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করেছে।’
ইসলামী আন্দোলনের নেতা জান্নাতুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে। ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে হামলার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিল মাদরাসার কিছু ছাত্র। পুলিশ নির্বিচারে গুলি করেছে। চারজন নিহত হয়েছে। আরও ২৫-৩০ জন আহত আছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, সঠিক চিকিৎসা দিয়ে সবাইকে সুস্থ করা হোক। না হলে বাংলাদেশের জনগণ রাজপথে নেমে আসবে। আজ রাতের মধ্যে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
হেফাজত নেতা হারুন ইজাহার সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বাংলাদেশ ছাড়তে হবে।’
হারুন ইজাহারের বক্তব্যের সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও লাশঘরের সামনে জড়ো হওয় শ’খানেক হেফাজত কর্মী স্লোগান দেয়, ‘গো ব্যাক মোদি। হেফাজতের ঘোষণা মোদী থাকবে না।’
জুনাইদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের সামনে কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি বিকেল সাড়ে ৫টায় হাসপাতালে পৌঁছান। লাশঘরে নিহতদের দেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু হেফাজতের কিছু নেতাকর্মী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মোদির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, লাশ ছাড়া আমরা কেউ এখান থেকে যাব না।
তবে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে লাশঘর থেকে লাশ পৃথক চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মর্গে নেওয়া হয়। এসময় পুলিশ ও সোয়াত সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংসদ মহোদয় মাদরাসায় বৈঠক করছেন। সেখানে নিহত যারা তাদের লাশ হস্তান্তর, ময়নাতদন্ত- এ সব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে