অসাধু ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবিতে ভাড়াটিয়া পরিষদের মানববন্ধন
২৭ মার্চ ২০২১ ১৫:৩৪
ঢাকা: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ভাড়াটিয়া পরিষদ। শনিবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বানিহার বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাস আসার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আগুন লেগেছে। প্রতিদিনই লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। চাল, তেল, ডাল, মাংস, সব কিছুরই দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা রাজধানীর সাধারণ ভাড়াটিয়াসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে পুরো জাতি আজ অসহায় হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা, প্রতিকেজি বয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, পাকিস্তানি বা সোনালি মুরগি ৩৫০-৩৭০ টাকা, এক কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এত দাম দিয়ে বাজার করে টিকে থাকা অসম্ভব। অন্যদিকে পবিত্র রমজান সামনে রেখে চিনি, ছোলা, ডাল সহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়িয়ে চলেছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এই চক্রের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে এবং রেশনের মাধ্যমে সস্তা ও বাঁধামূল্যে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।’
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, ‘করোনা মহামারিতে এমনিতেই মানুষ দিশেহারা এমন সময়ে পানির মূল্য বৃদ্ধির এ প্রস্তাব অমানবিক। পানির দাম বাড়ানো হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও বাড়ি ভাড়ায় অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে। মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। অবিলম্বে এ প্রস্তাব বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোস্তফা বলেন, ‘চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্যসামগ্রীর দাম অনেক আগেই সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের দুরাবস্থা দেখার কেউ নেই।’
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব) এর আহ্বায়ক মো. মুর্শিদুল হক বলেন, ‘২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি কমেছে এমন ১৫টি দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভারত ও পাকিস্তানের নাম থাকলেও বাংলাদেশের নাম নেই।’
বিশ্বব্যাংকের তালিকার ওই ১৫টি দেশে যে গতিতে দারিদ্র্য কমেছে, বাংলাদেশে কমেছে এর চেয়ে কম গতিতে। এর মূল কারণ আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। আমাদের মাথাপিছু আয় যতটা বেড়েছে মাথাপিছু ব্যয় তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। নিম্নআয়ের মানুষ যা আয় করেন তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে নজর দেয়া একান্ত জরুরি।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. জামাল শিকদার, রোখসানা বাহার, গোলাম ফারুক মজনু, শাহজাহান সিরাজ, অন্তর রহমান, শামীম আহমেদ, শেফালী আক্তার, মো. সুমন প্রমুখ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে