গুলি থেকেই জানা যাবে অপরাধীর পরিচয়, আসছে ‘আবিস’
২৭ মার্চ ২০২১ ১৬:৫৪
ঢাকা: অস্ত্র দ্বারা সংগঠিত হত্যাসহ যে কোনো ঘটনার জট খুলতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অটোমেটেড ব্যালাস্টিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আবিস) নামের একটি সফটওয়্যারের প্রযুক্তির মাধ্যমে কাউকে গুলি করে হত্যা করা হলে বা কাউকে গুলিবিদ্ধ করা হলে কিংবা গুলি ছোড়ার ঘটনায় দ্রুতই অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। তবে এ প্রযুক্তির জন্য দেশে বিদ্যমান বৈধভাবে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিটি অস্ত্রের ডাটাবেজ তৈরি করবে সিআইডি। এ ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়া বৈধ অস্ত্রের মালিকদের পরিচয়ও সংরক্ষণ করবে সিআইডি।
বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বর্তমানে দেশে লাইসেন্স বা অনুমোদন প্রাপ্ত প্রায় দুই লাখ বৈধ অস্ত্র রয়েছে। তবে এ সব বৈধ অস্ত্রের মালিকদের পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ডিলারের কাছে সংরক্ষিত নেই। তাই অস্ত্রের ডাটা তৈরিতে সিআইডি দেশের ৬৪ জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। আর এ জন্য দেশের সব জেলার সিআইডির বিদ্যমান অফিসে বৈধ অস্ত্রের মালিকরাও অস্ত্রের নমুনা দিতে পারবেন। এতে রাজধানী ঢাকায় আসার বিড়ম্বনা কমবে বলে মনে করছে সিআইডি।
সিআইডি বলছে, যখন গুলির দ্বারা কোনো ঘটনা ঘটে তখন তদন্তের স্বার্থে সর্বপ্রথম জানতে হয় গুলিটি কি বৈধ অস্ত্রের নাকি অবৈধ অস্ত্রের ছিল। কিন্তু এ কাজটি করতে গিয়ে সিআইডিকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কারণ সিআইডির কাছে বৈধ অস্ত্রের সুনির্দিষ্ট কোনো ডাটা নেই। ফলে গুলিটির পরিচয় শনাক্তে তদন্ত কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। আর এ কঠিনকাজ সহজতর করতেই ‘আবিস’ নামের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও সিআইডি’র প্রধান মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে ডিএনএ ব্যাংক তৈরি করেছি। যেটা আমাদেরকে ভালো ফলাফল দিচ্ছে। দ্রুত আসামি শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছি আমরা। তখন আমরা ভাবলাম যদি একইভাবে অস্ত্রের জন্যও যদি অটোমেটেড ব্যালাস্টিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম বা আবিস এ ডাটাবেজ তৈরি করি তাহলে তো অস্ত্রগুলোর পরিচয় এবং গুলি দ্বারা অপরাধ সংগঠিত হলে তাও শনাক্ত করতে পারব। এ ভাবনা থেকেই আমরা এরইমধ্যে আর্মস সেলস ডিলারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি বৈঠকে তাদের কাছে বৈধ অস্ত্র মালিকদের তথ্য চেয়েছি। তারা আমাদেরকে বলেছে সব তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে যা যা আছে সেগুলো দিয়ে তারা সহযোগিতা করবে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি গত ১০ বছরে কী পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে বৈধভাবে। তারা সঠিক সংখ্যা না জানাতে পারলেও আনুমানিক ২ লাখ হবে বলে জানিয়েছে। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে গত ১০ বছরে যেসব অস্ত্র বিক্রি হয়েছে সেসব অস্ত্র সংগ্রহ করব এবং সেগুলোর ডাটা সংগ্রহ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি অস্ত্রেরই কিছু স্বতন্ত্র কোড আছে। এটা অনেকটা মোবাইল ফোনের আইএমইআই-এর মতো। ওই কোড অস্ত্র বিক্রেতারা সিআইডিকে দেবেন। তাহলেই বোঝা যাবে অস্ত্রের ধরন কী। যদি একান্তই কেউ দিতে না পারেন, তাহলে তারা গুলির খোসা জমা দেবেন। তবে নতুন করে কোনো অস্ত্র কিনলে এখন থেকে সঙ্গে সঙ্গে সে অস্ত্রের কোড সিআইডিকে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে।’
সিআইডি’র প্রধান বলেন, ‘যখন সব লাইসেন্স করা অস্ত্রের ডাটা সংগ্রহ হয়ে যাবে এবং নতুন বিক্রি হওয়া অস্ত্রগুলোও প্রতিনিয়ত ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হবে তখন কোথাও যদি ক্রাইম সিন হয় এবং সেখান থেকে যখন আমরা কোনো গুলি বা এর খোসা সংগ্রহ করব তখন দ্রুতই আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হবো যে এটি বৈধ নাকি অবৈধ। সেই সঙ্গে এটাও শনাক্ত করতে সক্ষম হবো কার অস্ত্রে এটি ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতির কারণে যারা বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহার করে তারা এমনটা করতে চাইবে না। আবার দেশে কী পরিমাণ অস্ত্র অনুমোদিত রয়েছে তার একটা সুনির্দিষ্ট প্রোফাইল তৈরি হবে। পাশাপাশি আমাদের যে মূল উদ্দেশ্য তদন্ত, সেটি কাজ সহজ হবে। মূলত ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডগুলোতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে।’
তবে বৈধ অস্ত্রের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে অস্ত্র মালিকরা যাতে কোনো বিড়ম্বনায় না পড়তে হয় সেটি নিশ্চিত করে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমাদের ৬৪ জেলায় সিআইডি অফিসে অস্ত্র মালিকরা তাদের অস্ত্রের নমুনা জমা দিতে পারবেন।’
সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার ইনচার্জ আবু তাহের ফারুকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ম্যানুয়ালি পদ্ধিতে গুলির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করি। কিন্তু যখন অটোমেটেড ব্যালাস্টিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম বা আবিস এর সক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে তখন আমরা শুধুমাত্র গুলি বা এর খোসা সংগ্রহ করেই স্ক্যানিং করলেই পুরো পরিচয় ককম্পিটার স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। আর এর মাধ্যমে তদন্ত কাজ সহজ হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সিআইডির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমাদের কাছে অতীদে বিক্রিত অস্ত্রের ডাটা চেয়েছে। কিন্তু আমরা তো এমনিতেই অস্ত্র বিক্রির তথ্য নিয়মিত জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে থাকি। এখন সিআইডি তথ্য চেয়েছে তাদেরকেও দেব।’
সারাবাংলা/এসএইচ/একে