হেফাজতের হরতালে সমর্থন ইসলামী আন্দোলনের, ১ এপ্রিল সমাবেশ
২৭ মার্চ ২০২১ ১৮:২৩
ঢাকা: চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে সমর্থন জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। এসব হত্যার প্রতিবাদে আগামী ১ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ আয়োজনেরও ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম এ ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, আমাদের ভাইয়েরা শহিদ হয়েছেন। আমার বহু ভাই আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাঁতরাচ্ছেন। এর কারণটা কী? প্রতিবাদ মানুষ করবে, এটা আমাদের কৃষ্টি-কালচার-সংস্কৃতি। এ দেশে যদি প্রতিবাদ না হতো, আমরা লাল-সবুজ পতাকা পেতাম না। প্রতিবাদের কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছি। এ দেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে, প্রতিরোধ করতে পারে। তাহলে কেন আজ আমাদের প্রতিবাদ করতে দেওয়া হবে না?
বাংলাদেশি মিছিল-মিটিং করা অবৈধ নয় উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার অধিকার রয়েছে। তাই বলে প্রতিবাদ করলেই তাদের বুকের ওপর গুলি চালাবেন, এই গুলি চালাতে দেওয়া হবে না। মোদি বাংলাদেশে এসেছেন, আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। খুনি মোদি, সাম্প্রদায়িক মোদি, জালেম মোদি বাংলাদেশে আসতে পারবেন না। ভারত থেকে যদি ভারতের প্রেসিডেন্ট আসতো তাহলে কোনো প্রতিবাদ হতো না, তাকে সাদরে গ্রহণ করত, শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। কিন্তু ভারতের বিরোধিতা করা হয়নি, কসাই মোদি, খুনি মোদির বিরোধিতা করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা কী দেখেছি? যেই দিনটিতে মানুষ রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল, সেই দিনে মানুষের রক্ত নিয়ে দেশকে কলঙ্কিত করবেন, আমাদের স্বাধীনতা হরণ করবেন, স্বাধীনতাকে ধ্বংস করবেন?
হাটহাজারীতে চার জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন তিনি। পরে তিনি হেফাজতে ইসলামের ডাকা রোববারের (২৮ মার্চ) সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে সমর্থন করে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিতে মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুলি চালিয়ে যেসব পুলিশ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বরখাস্ত করতে হবে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে; প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে; মোদিবিরোধী আন্দোলনে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে এবং হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারদলীয় যারা সাধারণ মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ করেছে, অপমান-অপদস্থ করেছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; এবং সারাদেশের সব মানুষের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও প্রতিবাদ প্রকাশের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
এসময় মুফতি ফয়জুল করিম হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে পূর্ণ সমর্থন জানান এবং ১ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন।
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ, সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, মামুনুর রহমান, যুগ্মমহাসচিব কাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ অন্যরা।
এর আগে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের একটি মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে গিয়ে শেষ হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর