Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হেফাজতের ঘাঁটি চট্টগ্রামে ঢিলেঢালা হরতাল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ মার্চ ২০২১ ১২:০৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল সংঘটনটির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে চলছে। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছাড়া অন্য কোথাও হরতালের তেমন প্রভাব নেই। নগরীতে গাড়ি চলাচল প্রায় স্বাভাবিক আছে। তুলনামূলক কম হলেও মহাসড়কেও চলছে গাড়ি।

নগরীর বাইরে জেলার বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের কর্মীদের বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে পিকেটিং করতে আসা হেফাজত কর্মীদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ মার্চ) সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা মোড়, টাইগার পাস, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখা যায়, রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পু, হিউম্যান হলার, সিটিবাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করছে। ব্যক্তিগত যানবাহন কম থাকায় রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা।

নগরীর লালখান বাজার থেকে অফিসের মাইক্রোবাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে সীতাকুণ্ডে পৌঁছান বিএসআরএম স্টিলসের বার আউলিয়া ইউনিটের ইনচার্জ (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) ইউসুফ সোহেল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, অফিসের মাইক্রোবাসেই প্রতিদিনের মতো এসেছি। রাস্তায় হরতালকারীদের কাউকে দেখিনি। যানবাহন প্রতিদিন যেভাবে চলাচল করে সেভাবেই চলছে। মহাসড়কেও দূরপাল্লার বড় গাড়ি দেখেছি। তবে কিছুটা কম।

সকাল সাতটার দিকে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে ২ নম্বর রুটের সিটিবাসে করে লালখানবাজারে অফিসে যান ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক আহসানুল কবির রিটন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘টেক্সি, টেম্পু, বাস স্বাভাবিক চলতে দেখেছি। আমি নিজেও নির্বিঘ্নে অফিসে এসেছি। কোথাও হরতালকারীদের কাউকে দেখিনি।’

বিজ্ঞাপন

নগরীর দামপাড়ায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। আবার বাসের জন্য কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড়ও দেখা গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটিগেট দিয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাক-লরি, কাভার্ড ভ্যান আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। রাস্তায়ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলতে দেখা গেছে।

হেফাজতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার সামনে সংগঠনটির কর্মীদের বানানো ইটের দেয়াল এখনও রয়ে গেছে। এ কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের একাংশে যানবাহন চলাচল শুক্রবার বিকেল থেকে বন্ধ আছে। হরতালের কারণে ওই সড়কে অটোরিকশা ছাড়া আর কোনো যানবাহন তেমন নেই। একইভাবে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কেও যানবাহন তুলনামূলকভাবে কম চলাচল করছে।

সকালে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে কৃষি ব্যাংকের হাটহাজারীর মদনহাট শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা জয়া শর্ম্মা ভট্টাচার্য কর্মস্থলে যান। জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের এই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, রাস্তায় লোকাল বাস নেই। কিছু সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া আর কোনো গাড়ি দেখিনি। দোকানপাট বন্ধ। এলাকায় থমথমে অবস্থা দেখেছি। এখন সোয়া ১০টা। আমাদের দু’জন কর্মকর্তা গাড়ির অভাবে এখনও অফিসে আসতে পারেননি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিএনজি টেক্সি ভাড়া করে এসেছি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, মাদরাসার সামনে দেয়ালটা এখনও আছে। সেজন্য গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। আমরা তাদের বলেছি, তারা নিজেরাই যেন দেয়ালটা সরিয়ে নেয়। ছাত্ররা এখন মাদরাসার ভেতরে আছে। এখানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটি সড়কে যানবাহন চলাচলে একটু সমস্যা আছে। কক্সবাজার যাবার পথেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। না হলে পরিস্থিতি একেবারেই পিসফুল আছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহন চললেও বড় গাড়ি তেমন চলছে না। শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে বড় যানবাহন তেমন ছাড়তে দেখা যায়নি। মহাসড়কের পথে পথে হেফাজত কর্মীদের যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পটিয়া উপজেলা থেকে লোহাগাড়ার আমিরাবাদে কর্মস্থলে যাওয়া ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, পটিয়ার খরনা, মুজাফফরাবাদ রাস্তায় মাদরাসার ছোট ছোট ছেলেদের লাঠি দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা গাড়ি যেতে বাধা দিচ্ছে। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে দেখেছি। মহাসড়কে বড় গাড়ি তেমন নেই।

জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটি সড়কে বাস চলছে না। যেহেতু এসব গাড়ি হাটহাজারী হয়ে যেতে হয়, সেখানে অবরোধ আছে। কক্সবাজারে গাড়ি যাচ্ছে।’

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ঢাকা, সিলেটের উদ্দেশে এবং অভ্যন্তরীণ ট্রেনগুলো যথারীতি ছেড়ে গেছে। স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, চট্টলা, পাহাড়িকা, কর্ণফুলী-সব ট্রেন ছেড়ে গেছে। আমাদের লোকাল ট্রেন দোহাজারি থেকে এসেছে।

সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা খোলা আছে। তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরীতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্যান্য দোকান, মার্কেট-শপিংমল বন্ধ দেখা যায়, যেগুলো অন্যান্যদিনে এসময় খুলতে শুরু করে। কিন্তু বেলা গড়াতেই সেগুলো যথারীতি ‍খুলতে শুরু করে।

নগরীর কোথাও হেফাজতের নেতাকর্মীদের হরতালের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পিকেটিংও চোখে পড়েনি। ২০১৩ সালে হেফাজতের ডাকা হরতালে দিনভর নগরীর ওয়াসা মোড় দখল করে রেখেছিল সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ হয়েছিল। কিন্তু এবারের হরতালে ওয়াসা মোড় এলাকায় হেফাজত কর্মীদের দেখা যায়নি। একইভাবে হেফাজতের সম্ভাব্য বিক্ষোভের স্থান অক্সিজেন মোড়েও তাদের দেখা মেলেনি। তবে পটিয়া পৌরসভা সদরে আল জামেয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া মাদরাসার ছাত্ররা হরতালের সমর্থন মিছিল-সমাবেশ করেছে। কর্ণফুলী উপজেলার ফাজির খাঁর হাট এলাকায় হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।

বেলা ১১টার দিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে পিকেটিং করতে আসা হেফাজত কর্মীদের ধাওয়া দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলে থাকা সারাবাংলার ফটো করেসপন্ডেন্ট শ্যামল নন্দী জানিয়েছেন, আনুমানিক ১৫ জনের মতো হেফাজত কর্মী জড়ো হয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ডে। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে তাদের ধাওয়া দেয় এবং তাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে হরতালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগরী ও জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নগরীর কাজির দেউড়ির মোড়ে দায়িত্বরত নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোর সাড়ে চারটা থেকে আমরা মাঠে আছি। আমরা কোথাও অপ্রীতিকর কিছু পাইনি। যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। কেউ কোথাও বাধা পাবার কোনো অভিযোগ করেনি।’

সকাল সোয়া ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। গাড়ি তো চলছে। দোকানপাট প্রথমদিকে বন্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে খুলছে। আমরা অতিরিক্ত পুলিশ রেখেছি। র‌্যাব আছে। বিজিবি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

হরতালের বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালে সমর্থন দিয়েছে। মহাসড়কে কোথাও গাড়ি চলছে না। ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেরাই হরতাল সমর্থন করে মাঠে নেমে এসেছে। আমরা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে সরকারের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে- হেফাজতের নিরীহ কর্মীদের গুলি করেছে যেসব পুলিশ অফিসার তাদের এবং হাটহাজারী থানার ওসিকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সকল শহীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।’

হাটহাজারী মাদরাসার সামনে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শীঘ্রই একটা সিদ্ধান্ত নেব।’

সারাবাংলা/আরডি/এএম

টপ নিউজ হরতাল হেফাজতে ইসলাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর