যাত্রা অনেক দূর, এটিই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রতিজ্ঞা
২৮ মার্চ ২০২১ ১৫:৩৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যে আদর্শের ভিত্তিতে আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান রয়েছে। সেই আদর্শ ধারণ করেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে এটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি ও নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। দলীয় নেতাকর্মীদেরও আলোচনা সভা, সেমিনারসহ কর্মশালাগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার ওপর জোর দেন তিনি। পাশাপাশি খোলা স্থানে অনুষ্ঠান পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেহেতু আবার দেখা গেছে এবং ভাইরাসটাও আবার ভিন্ন ভিন্নভাবে এসেছে। আবার ঠিক আগের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। তখনও আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। কোনো জলাধার যেন অনাবাদি না থেকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ প্রাদুর্ভাব কতদূর যাবে, এখনও আমরা তা জানি না। তার জন্য আবারও আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ খাদ্যে কষ্ট না পায়, আবার দেশের মানুষ যেন সুস্থ থাকতে পারে এবং প্রয়োজনে আমরা যেন অপরকে সাহায্য করতে পারি। সেইভাবে আমাদেরকে চলতে হবে। সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন।’
আমরা যে সমস্ত কর্মসূচি নিয়েছি এরইমধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। প্রত্যেকটা গ্রামে মানুষর শহরের সুযোগ পাবে। অর্থাৎ আমার গ্রাম আমার শহর-এই শহরের নাগরিক সুবিধা গ্রামের মানুষ পাবে। এরইমধ্যে রাস্তাঘাট, পুল ব্রিজ, ব্যাপকভাবে করছি। তাছাড়া আমরা বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট করছি। এগুলো যখন সম্পন্ন হবে, আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে আরও মজবুত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। আমরা সেইভাবেই আমাদের কাজ করে যাচ্ছি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সারাবিশ্ব যে পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলে সেই পররাষ্ট্রনীতির আলোকেই আমরা সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে যাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের দিয়েছিলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। আজকে যেভাবে শুভেচ্ছা বার্তাগুলো এসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের সেই নীতি সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়, এটা তারই প্রতিফলন ঘটেছে।’
সে জন্য বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই এবং যারা আমাদের এই শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, ২৬ শে মার্চ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও একটা শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর বোধহয় কোনো অঞ্চল কেউ বাদ নেই, বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা বার্তা দেয়নি। এটাই হচ্ছে সার্থকতা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি। আজকে সেই স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব এবং সেটা দেওয়ার মতো দক্ষতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।’
‘আর সেই অর্জন করেছে বলেই আজকে সারাবিশ্ব, বাংলাদেশের জনগণকে সম্মানিত করেছে আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসে এবং মুজিববর্ষ উপলকক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে।’
দেশের জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তিনি তার প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীর প্রতিও অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যাত্রা অনেক দূর যেতে হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ; আজকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যা জাতির পিতার স্বপ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়েছি ২০ দশমিক ৫ ভাগে। হয়ত করোনার কারণে কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলব। এই বাংলাদেশ ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ব ইনশাল্লাহ। আমাদের স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ করে এই সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং মুজিববর্ষে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
শেখ হাসিনা তার দলের প্রতিটি নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমি তাদেরকে কাছে এইটুকুই চাই, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যে আদর্শকে আবার আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যে আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান রয়েছে। সেই আদর্শ ধারণ করেই আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির।
সারাবাংলা/এনআর/একে