চোখ রাঙাচ্ছে উগ্রবাদী গোষ্ঠী, রুখে দেওয়ার আহ্বান আওয়ামী লীগের
২৮ মার্চ ২০২১ ১৮:৫৪
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই তুলে দেশের ওপর চোখ রাঙানি দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পথে অন্তরায় তৈরি করতে চায় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহিংস অপতৎপরতা রুখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সকল শক্তি ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতারা এ আহ্বান জানান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলি ও হামলার ঘটনায় রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে হেফাজতে ইসলাম। এদিকে সকাল থেকে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় দফায় দফায় মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তবে এই হরতালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সরকারবিরোধী অপতৎপরতা প্রতিরোধে রাজপথে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন।
সভার সূচনা বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহিংস অপতৎপরতা রুখতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সকল শক্তিকে, সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ভারত বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ঢাকা-চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ জাতীয় মসজিদের ভেতরে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সফলতায় যাদের গাত্রদাহ, বিএনপি এই অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক।’
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের নৈতিক অধিকার আছে কি না— জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখন জাতির সামনে প্রশ্ন হলো— স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের নৈতিক অধিকার তাদের আছে কি না?’
২৫ ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন না করে করোনার ভুয়া অজুহাতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া আরেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, বাঙালি জাতি যখন একাত্তরের চেতনা নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবার শপথে বলিয়ান, সেই সময় এক করে সেই পরাজিত শকুনেরা নতুন করে আমার এই মানচিত্রকে খামচে ধরার পরিকল্পনা করছে। তারা অপচেষ্টা করছে। কিন্তু ওরা জানে না, এই জাতির সন্তানেরা জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করতে পারে, আর আজ প্রয়োজন হলে আরেকবার নতুন করে লড়াই করবে। মৌলবাদীদের জায়গা বাংলার মাটিতে হবে না— এটাই হোক আমাদের আজকের শপথ।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের অহংকার আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আামদের একজন শেখ হাসিনা আছে। সেই শেখ হাসিনার কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করার জন্য, সেই পথকে সহজ করার জন্য আামদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যারা একাত্তর সাথে বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছিলেন, সেই একাত্তরের খুনিরা আর পঁচাত্তরের খুনিরা আবার জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
এসএম কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘মোদির বিরোধিতা নয়, বিরোধিতা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর। বিরোধিতা বঙ্গবন্ধুর, বিরোধিতা শেখ হাসিনার। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, যারা ৭ মার্চের ভাষা বোঝে না, সেই বিএনপি-জামায়াত, একাত্তর-পঁচাত্তরের খুনি আর ২০০৪ সালের খুনিরা আজ ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছি। সেই এগিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে আমরা যখন সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি মহোৎসবে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি সকলকে সঙ্গে নিয়ে; ঠিক সেই মুহূর্তে একাত্তরের মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, তাদের আশ্রয়দাতা, ধর্ম-সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকরা আবার বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দাঁড়িয়েও ধর্মান্ধতার কথা বলে, ধর্মের দোহাই দিয়ে একাত্তরে যেমন আমার মা-বোনদের পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, একাত্তরের দিনগুলোতে যখন দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখনও মুষ্টিমেয় কিছু লোক ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঠিক তেমনি আজকের দিনে আমরা যখন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন কেউ কেউ একাত্তরের ন্যায় আমাদের উপর চোখ রাঙানি দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার আমাদের এগিয়ে চলার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে চায়, ধর্মের দোহাই, ধর্মের কথা বলে। তাই আমাদের সকলকে শপথ গ্রহণ করতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সকলে আরও বেশি দায়িত্বশীল হব, সকলে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাব সম্মুখপানে, এটাই হোক আজকের শপথ।’
সারাবাংলা/এনআর/একে