হরতাল কামিয়াব হয়েছে: বাবুনগরী
২৮ মার্চ ২০২১ ২০:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সারাদেশে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল হয়েছে দাবি করে বাংলাদেশের জনগণ ও আলেম-ওলামাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হেফাজতের ১৬ জন কর্মী নিহত হয়েছে দাবি করে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (২৮ মার্চ) বিকেলে হরতাল শেষের কিছুক্ষণ আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসা গেটের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। ‘অসুস্থ’ জুনাইদ বাবুনগরী হুইল চেয়ারে করে মাদরাসার ভেতর থেকে বের হন।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আমির বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে হরতালের ডাক দিয়েছি। ১৬ জন শহীদ হয়েছে, আরও অনেকে আহত হয়েছেন, গ্রেফতারও করেছে। এই জুলুম-বর্বরতার বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দিয়েছি। আমাদের হরতাল ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমাদের হরতাল ইনসাফের পক্ষে, জুলুমের বিরুদ্ধে। হরতাল কামিয়াব হয়েছে, হরতাল সফল হয়েছে।’
সংঘাতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাবুনগরী বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ শুক্রবার, হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে কোনো উসকানি ছাড়াই প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, বিশেষভাবে হাটহাজারী থানার ওসি রফিক গুলি করে চারজনকে নিহত করেছে। সারাদেশে আরও নিহত হয়েছে। মোট ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। এটা কোনো মামুলি কথা নয়। এই কারণে হরতালের ডাক দিয়েছি।’
‘আমাদের হরতাল সুশৃঙ্খলভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। এই হরতালে সারাদেশের জনগণ এবং আলেম-ওলামারা সাড়া দিয়েছে। জনগণ এবং আলেম-ওলামাদের শুকরিয়া জানাচ্ছি। ইসলাম বিরোধী কাজ হলে, জুলুম-নির্যাতন হলে, আমরা আলেম-ওলামারা, তৌহিদী জনতা, ছাত্র-জনতা এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’
হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় সরকারের পেটোয়া বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করছে, হামলা-আক্রমণ করছে, আহত-নিহত করছে। আমাদের নায়েবে আমির আব্দুল হামিদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের কাছে দাবি, হামলা বন্ধ করতে হবে। যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের নিঃশর্তভাবে ছেড়ে দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
এরপর বাবুনগরী হাটহাজারী কলেজ রোডে হরতালের সমর্থনে হেফাজতের জমায়েতে যান। সেখানে সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হরতালের ডাক দিয়েছিলাম। আলহামদুল্লিাহ হরতাল সফল হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। আপনাদের মোবারকবাদ জানাচ্ছি। এভাবে আমরা ইসলামের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ব ইনশল্লাহ। রক্ত দিতে হবে, রক্ত ছাড়া কাজ হবে না।’
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাটহাজারীর মতো পবিত্র জায়গায় ওসি রফিক যে বর্বরতা চালিয়েছে, ওসি রফিক এখানে থাকতে পারবে না। সে বড় ধরনের বর্বরতা চালিয়েছে। তার অর্ডারে এখানে সবকিছু হয়েছে। মাদরাসায় আমার রুমে গেলে সে আমার সামনে ছাত্রের মতো বসে থাকে। আমাকে অনেক সম্মান করে কথা বলে। সে ওখানে (মাদরাসার ভেতর) একরকম, বাইরে আরেকরকম। সে মোনাফেক। তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।’
গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলায় দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার একদল ছাত্র, যারা হেফাজতের কর্মী হিসেবে পরিচিত, তারা মিছিল বের করে। বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে তারা হাটহাজারী থানার সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা থানায় ভাংচুর করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও সরকারি ডাকবাংলোর ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালান। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে চারজন চমেক হাসপাতালে মারা যান, যাদের মধ্যে তিনজন ওই মাদরাসার ছাত্র।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই মাদরাসার সামনে ছাত্ররা সড়কে ইটেরদেওয়াল তুলে গত তিনদিন ধরে অবরোধ করছে। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই