Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্রেণি কক্ষে ফিরতে উদগ্রীব শিক্ষার্থীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২১ ০৯:৪৩

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এক বছরেরও বেশি সময়। গত বছরের মার্চ মাসের ১৮ তারিখ ক্লাসরুম থেকে বের হওয়ার পর থেকেই বাসায় শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা ভার্চুয়ালি চললেও ক্লাসরুমে ফের হয়নি তাদের। কর্মজীবীরা নানান প্রয়োজনে বাইরের জীবনের সঙ্গে তালমিলিয়ে চললেও ঘরবাড়িতেই কেটেছে শিক্ষার্থীদের এই দীর্ঘসময়। এতে একদিকে লেখাপড়ার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে একঘেয়েমী জীবনে ক্লান্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ফিরতে উদ্গ্রীব।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা গেল গত এক সপ্তাহে শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে; শ্রেণিকক্ষে ফেরা না ফেরা নিয়ে। কথা বলেছে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গেও। তাদের মধ্যে ১৭ জন বাদে, প্রায় সব শিক্ষার্থীই ক্লাস শুরু করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে অভিভাবকদের অর্ধেকই আবার প্রকাশ করেছেন সংশয়।

আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী জায়রা ও তার মা রায়হানা শারমিন দুজনেই বলছেন, বাসায় থাকতে থাকতে স্বাভাবিক পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যারও মুখোমুখি হচ্ছি আমরা, যেমন অল্পতে রেগে যাওয়া কিংবা গভীর রাত পর্যন্ত ঘুম না আসা। তাদের দুজনেরই মত, পুরনো নিয়মে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়ে গেলে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না।

জায়রা বলেন, আমি খুব একটা রাগি মানুষ না, চুপচাপ স্বভাবের কারণে প্রকাশ করার চেয়ে রাগ গিলতেই বেশি পছন্দ করতাম। কিন্তু এখন হচ্ছে উল্টো। এর কারণ সারাদিন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা। দিনের একটা সময় ক্লাস করতে হয়। এর বাইরেও ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকাটা একটা নেশা হয়ে গেছে। কলেজ খুললে এই নেশাটা আর থাকবে না।

জায়রার মতো ঢাকার ভিকারুননিসা, হলিক্রস আর নটরডেমের শিক্ষার্থীরাও একই কথা বলেছেন। উদয়ন কলেজ, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে একই প্রতিক্রিয়া। তবে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষে ক্লাসরুমে ফেরার পক্ষে মত দিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, ভ্যাকসিন না দিয়ে তাদেরকে যেন ক্লাসরুমে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়।

ওয়াসিম রানা নামে দ্বাদশের এক শিক্ষার্থী বলছেন, আমাদের তো এ বছর পরীক্ষা হওয়ার কথা। গেল একবছর ধরে ক্লাস করতে পারিনি। এখন ক্লাস হোক তবে তার আগে আমাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়া হোক।

বিজ্ঞাপন

ক্লাসরুম খোলার আগেই পরীক্ষা নেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন ওয়াসিমের বাবা ওয়াসিফ রানা। তিনি বলেন, পরীক্ষা হওয়ার আগে ক্লাস খুলে দেওয়াটা দরকার। এক বছর ধরে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। এখন না পড়িয়ে পরীক্ষা নেবেন? ক্লাস খোলার আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এমনি এমনি শিক্ষার্থীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন না।

এর আগে গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১’ এর একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়,৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাসে ফিরতে চাওয়ার তাগিদ। ওই প্রতিবেদনে ৭৬ শতাংশ অভিভাবক ও ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দ্রুত স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এছাড়াও ৫৮ শতাংশ শিক্ষক চাচ্ছিলেন ক্লাসে ফিরতে। এডুকেশন ওয়াচ-এর সমীক্ষায় দেশের আট বিভাগের আট জেলা থেকে ২১টি উপজেলায় তাদের সমীক্ষাটি করে এই ফল পেয়েছিল।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয় বন্ধের এক বছর পরে এসে ক্লাস খোলার পক্ষে এই হিসাব আরও বাড়বে ছাড়া কমবে না। তারপরও পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সক্ষমতা বিবেচনা করে আমাদেরকে বিদ্যালয় খুলে দিতে হবে। এখন ক্লাসে ফিরতে না পারলে শিক্ষার্থীরা মানসিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হবেন। এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, অনেকগুলো পরীক্ষা গত বছরে আমাদেরকে বাতিল করতে হয়েছে। এবারও যদি পরীক্ষা বাতিল করতে হয় তাহলে এটা ভবিষ্যতে বড় এক সংকট হিসেবে আবির্ভূত হবে দেশের জন্য। এখন ভ্যাকসিন এসে গেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে ভ্যকসিন দিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া হোক।

শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যাকসিন কাজ করছে। তেমন কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়াও নেই। তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিয়ে ক্লাস খুলে দিলেই হয়। এখন এটা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে কেবল মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এটি কিন্তু শিক্ষার্থীরাও দেখছে। এই বিষয়টি তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা তিনি দিয়েছেন দুদিন আগে। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালগুলোও খুলে দেওয়া হবে।

তবে ঈদের পর স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (২৮ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা স্কুল কলেজগুলো খুলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন হঠাৎ করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়াতে আমরা এখন নয়, রোজার ঈদের পরে আমরা স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেব। আর এই ফাঁকে বিশ^বিদ্যালয়ের হলগুলোসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসবের মেরামত লাগবে সেসব কাজ ইত্যবসরে তাঁর সরকার করে দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গেল বছরের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস দেশের ভেতর ছড়িয়ে পড়ায় সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা এখনও বন্ধ।

সারাবাংলা/টিএস/এএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে রুখে দিল নিউক্যাসেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮

সম্পর্কিত খবর