সংসদ মেডিকেল সেন্টারে করোনা নমুনা সংগ্রহে চরম অব্যবস্থাপনা
২৯ মার্চ ২০২১ ২৩:১৫
ঢাকা: আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশন। নিয়ম অনুযায়ী, এবারও সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সবার করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে। সে কারণে জাতীয় সংসদের মেডিকেল সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কিন্তু সেখানে নমুনা সংগ্রহ নিয়ে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সংসদ সদস্যসহ নমুনা জমা দিতে আসা অনেকেই।
সোমবার (২৯ মার্চ) জাতীয় সংসদ মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে নমুনা দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সংসদ সদস্যদের জন্য আলাদা চেয়ার রাখা হয়েছে মাত্র দু’টি, অন্যদের জন্য একটি। সংসদ সদস্যরা সেখানে গেলেই যত দ্রুতসম্ভব নমুনা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে হট্টগোলও চলছে। নামে মেডিকেল সেন্টার হলেও করোনা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ তো দূরের কথা, রীতিমতো গাদাগাদি করে সেখানে অবস্থান করতে হচ্ছে সবাইকে।
সকাল সোয়া ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদ মেডিকেল সেন্টারে অবস্থান করেন সারাবাংলার এই প্রতিবেদক। এই সময়ের মধ্যে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য এনামুল হক, আক্তারুজ্জামান বাবু ও সৈয়দা রুবিনা আক্তারসহ অনেককেই নমুনা দিতে দেখা গেছে। ওই সময়ই নমুনা সংগ্রহের কক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষের ভিড় লেগেই ছিল।
মেডিকেল সেন্টারটিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো কর্মচারীদের হট্টগোল ও ঠেলাঠেলির কারণে সংসদ সদস্যদের অনেককেই চরম বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। সেই লাইনের পেছনে সংসদ সদস্যদের জন্য দু’টি চেয়ার রাখা হলেও মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। মেডিকেল সেন্টারে দায়িত্ব পালনরতদের অনেকে আবার সংসদ সদস্যদের চিনতে না পারায় তাদের লাইনে দাঁড়াতে বলেছেন! অনেকেই আবার তাদের কাছে বয়স জিজ্ঞাসাসহ এমন কিছু প্রশ্ন করছেন, যাতে সংসদ সদস্যরা রীতিমতো বিব্রত হচ্ছিলেন।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদেরও পড়তে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। সংসদ সচিবালয় থেকে তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য ডাকা হলেও তাদের জন্য ছিল না কোনো ব্যবস্থা। নমুনা সংগ্রহকারীরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছিলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
এসময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা জাতীয় সংসদের গণসংযোগ শাখা থেকে নামের তালিকা পাঠানোর কথা বললেও মেডিকেল কর্মকর্তারা সেটি শুনতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে তারা সংসদের গণসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা জানান, গণমাধ্যমকর্মীদেরও নমুনা পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেডিকেলের কর্মকর্তাদের কয়েক দফা ভার্চুয়াল যোগাযোগের পর একজন নমুনা সংগ্রহকারী জানান, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কিছুক্ষণ পর অবশ্য আরেকজন এসে জানালেন, তালিকা তাদের হাতে না থাকায় আজ (সোমবার) তারা নমুনা নিতে পারবেন না, নমুনা দিতে হলে কাল (মঙ্গলবার) যেতে হবে। এসময় খোদ স্পিকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে জানানো হলেও নমুনা সংগ্রহকারীরা তাদের মঙ্গলবারই যেতে বলেন। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়ে ফিরে যেতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।
এ বিষয়ে কথা জানতে চাইলে সংসদের কর্মকর্তাদের ওপর চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. মাহমুদা খানম সিদ্দীকাও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নমুনা নেওয়া হচ্ছে। এই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ৪৮ ঘণ্টা কার্যকর থাকবে। অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ চলবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
করোনা নমুনা সংগ্রহ জাতীয় সংসদ নমুনা পরীক্ষা নমুনা সংগ্রহে অব্যবস্থাপনা সংসদ মেডিকেল সেন্টার