১১ দিনে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে ২৩ জেলায়
৩০ মার্চ ২০২১ ০২:৫৭
ঢাকা: গত ১৩ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা জেলার সংখ্যা প্রায় ৬ গুণ হয়েছে। গত ১৩ মার্চ যেখানে এমন ঝুঁকিপূর্ণ জেলার সংখ্যা ছিল ৬, সেখানে ২৪ মার্চ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জেলায়। অর্থাৎ এই ১১ দিনের ব্যবধানে দেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলার সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি।
সোমবার (২৯ মার্চ) অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি দেশে করোনা ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারে (এমআইএস) শাখায় ২৪ মার্চ পর্যন্ত আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ জেলা চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের একটা কমিটি করা আছে। সেই কমিটিকে আমরা জানিয়ে দিই, কোন কোন জেলায় সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি।
ডা. ফ্লোরা বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করি যে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কোনগুলো। ১৩ মার্চ যখন আমরা এই তথ্য বিশ্লেষণ করি, তখন ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ছিল ছয়টি। ২০ মার্চের বিশ্লেষণে এই সংখ্যা ছিল ২০। আর ২৪ মার্চ দেখেছি, ঝুঁকিপূর্ণ জেলা বেড়ে হয়েছে ২৯টি।
তিনি বলেন, এর অর্থ, সংক্রমণ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে। সেদিক থেকে আমাদের সংক্রমণের চেইন যদি আমরা ভাঙতে চাই, তাহলে সারা বাংলাদেশের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, জেলা পর্যায়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি নিয়ন্ত্রণ কমিটি ঠিক করবে। তবে আমরা বিষয়টি মনিটরিং করব।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ অধিদফতরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, প্রথম দিকে মানুষ বাইরে কম বের হতো। তখন আমরা দেখেছি, যারা বাইরে যাচ্ছেন বা কাজে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। এখন সবাই বাইরে বের হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণরা এখন অনেক বেশি বের হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি দেখা যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা ২৯টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি যেখানে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি। এর মাঝে আছে ঢাকা , চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর, শরীয়তপুর, নীলফামারী, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ি, খুলনা, নরসিংদী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, মাদারীপুর, নওগাঁ ও রাজশাহী। এর অর্থ, সারাদেশে বিভিন্নভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এটি তারই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে যে ১৮টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন তাদের এলাকায় সংক্রমণের হার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে সংক্রমণের যে চেইন, সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা যদি মানুষের চলাচল সীমিত করতে পারি, তাহলে এখনকার যে চলমান সংকট, অর্থাৎ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিকে আমরা রুখে দিতে পারব। সেই জায়গাতে বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য প্রশাসন এক সঙ্গে বসে সবাইকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এটি আমরা গত বছরও দেখেছি। এ বছরও আমরা তেমনটা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে আমাদের কোভিড রোগ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে তার এলাকায় কিভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, তিন মাসে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সারাদেশের মানুষ চরম অনীহা, অবহেলা ও বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েছে। আর এ কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকে সুরক্ষিত না হলে আমরা কেউ সুরক্ষিত নই।
সারাবাংলা/এসবি/এআই