রমরমা পাইরেসির পাশাপাশি উগ্রবাদী বই বিক্রি হচ্ছে সেইবই অ্যাপে
৩০ মার্চ ২০২১ ২১:৪০
ঢাকা: তৈরি পোশাক রফতানি প্রতিষ্ঠান ডার্ড গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘সেইবই’-এর বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান লেখকের বই বিনা অনুমতিতে ই-বুক আকারে প্রকাশ করে রমরমা ব্যবসা করে আসছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় লেখকদের বই পাইরেসি করে তারা রমরমা ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে।
বিক্রি হচ্ছে পাইরেসি বই
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই পাইরেসির দায়ে ‘সেইবই’ অ্যাপটি গুগল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে তারা ফের সেটি চালু করেছে। ‘সেইবই’ অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বইগুলো তারা এরই মধ্যে সরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ অসংখ্য লেখকের বই তারা দিব্যি বিক্রি করে যাচ্ছে। লেখকের অনুমোদনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ভুয়া চুক্তিপত্র উপস্থাপন করছে তারা। এমন অসাধু কাজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বেশ কয়েকজন লেখক ও প্রকাশক তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ নেই।
রয়্যালিটি পাচ্ছে না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবার
দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মারা গেছেন ২০১২ সালে। আর ‘সেইবই’-এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালে। অর্থাৎ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর প্রাক্কালে প্রতিষ্ঠানটি ছিল না। তাছাড়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় অধিকাংশ সময় থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ওয়াল্ডহেইমে বসবাস করা একমাত্র ছেলে শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ে কাছে। ‘সেইবই’ অ্যাপে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইয়ের ই-বুক বিক্রি হচ্ছে, এমন তথ্য তার কাছে নেই। এমনকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ও এ বিষয়টি অবগত নন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন।
‘সেইবই’ অ্যাপে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মোট ১২৫টি বইয়ের কোনোটিরই চুক্তিপত্র নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সুনীলের এসব বইয়ের প্রকাশ করার অনুমোদনদাতা হলেন বাংলাবাজারের অখ্যাত প্রকাশক ‘জ্যোৎস্না পাবলিশার্স’-এর স্বত্বাধিকারী স্বপন দত্ত। ওই প্রকাশকের কাছে সুনীলের কিছু বইয়ের ছাপা সংস্করণ মুদ্রণের অনুমতি নেওয়া আছে, কিন্তু ‘সেইবই’ অ্যাপে বিক্রি হচ্ছে লেখকের ই-বুক সংস্করণ, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্ল্যাটফর্ম। এমনকি সুনীল-সংক্রান্ত ‘সেইবই’-এর যাবতীয় লেনদেন হয় প্রকাশক স্বপন দত্তের সঙ্গে। লেখক বা তার উত্তরাধিকারী কেউ-ই ‘সেইবই’-এ বিক্রি হওয়া ই-বুকের কোনো রয়্যালটিই পাননি বলে দাবি করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়।
এ বিষয়ে জ্যোৎস্না পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী স্বপন দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে বলে গেছেন যে আমি তার বই যেকোনো জায়গায় চাইলে বিক্রি করতে পারব।’
লেখকের বইয়ের ই-বুক সংস্করণ বিক্রির কোনো অনুমোদন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দিয়েছেন কি না— জানতে চাইলে স্বপন দত্ত বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত কাগজ নেই। তবে তিনি মুখে বলেছিলেন।’
তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘ই-বুক ফরম্যাটে বই বিক্রির জন্য আমার বাবা কাউকে কোনো স্বত্ব দেননি। সেটি হলে তো আমরা জানতেই পারতাম। তাছাড়া কলকাতায় এত বড় বড় প্রতিষ্ঠান থাকতে বাবা কেন বাংলাদেশের একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে তার গ্রন্থস্বত্ব দিতে যাবেন? শুনেছি, ঢাকায় নাকি বাবার বই পাইরেসি করে বিক্রি করা হয়। এটাও একরকম পাইরেসি। আমরা হার্ড-বুক বা ই-বুক— কোনো বই বিক্রির রয়্যালিটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাইনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘সেইবই’-এর পক্ষ থেকে বিক্রি হওয়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইয়ের রয়্যালিটি নিয়মিতই পাচ্ছে জ্যোৎস্না পাবলিশার্স। এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লিখিত চুক্তি ছাড়া তার বই কিভাবে ই-বুক আকারে বিক্রি করছেন— এমন প্রশ্ন করলে ডার্ড গ্রুপের মিডিয়া কমিউনিকেশন অফিসার অনুপম কুমার পাল বলেন, ‘আমরা প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি করেছি। লেখকের সঙ্গে কোনো চুক্তি আছে কি না, সেটি প্রকাশক বলতে পারবেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইয়ের বিষয়ে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তার ব্যাখ্যা জ্যোৎস্না পাবলিশার্স দিতে পারবে। এটা আমাদের দায় নয়।’
অবৈধ কিছু বিক্রির দায় আপনাদের ওপর পড়ে কি না— এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি অনুপম কুমার পাল।
দেশের বাইরে টাকা যাচ্ছে হুন্ডিতে
হুন্ডি কিংবা অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে টাকা পাঠিয়ে যাচ্ছে ‘সেইবই’ কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে লেখক রয়্যালিটি, প্রকাশকের সম্মানি কিংবা কর্মীর বেতন দেওয়ার নাম করে মাসের পর মাস বিপুল অঙ্কের টাকা বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হয়েছে।
ভারতে ‘সেইবই’-এর হয়ে একাধিকবার টাকা পাঠিয়েছেন— প্রতিষ্ঠানটির সাবেক একজন কর্মী এ তথ্য জানিয়েছেন সারাবাংলাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠালে খরচ বেশি পড়ে। তাই খরচ কমানোর জন্য অবৈধভাবেই ভারতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসা হয়েছে।’
“‘সেইবই’-এর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যখনই ভারত ভ্রমণে গেছেন, তখনই তারা অবৈধ উপায়ে টাকা নিয়ে গেছেন,’— বলেন ‘সেইবই’-এর সাবেক ওই কর্মী। তার দাবি, কাজটি বেশি করেছেন অনুপম কুমার পাল নিজে।
‘সেইবই’-এর ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন নীহারেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজন। মাসে মাসে পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই ভারতীয় নাগরিক। ভারতীয় মুদ্রায় তার বেতন ছিল মাসে ১২ হাজার রুপি। তিনি মূলত ‘সেইবই’-এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও প্রকাশকদের যোগসূত্র তৈরি করতেন। নীহারেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় চার বছরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত থেকে নিয়েছেন ৫ লাখ ৭৬ হাজার রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাত লাখ টাকা। এই টাকা নীহারেন্দুকে দেওয়া হয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে নীহারেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের। তিনি দাবি করেন, “আমি দেড় বছর মতো ‘সেইবই’-এর সঙ্গে ছিলাম। তারা আমাকে নিয়োগপত্র দিয়েছিল। নিয়মিত পারিশ্রমিকও পেয়েছি।”
টাকা বৈধভাবে হাতে পেয়েছেন— এমন প্রশ্ন করলে নীহারেন্দু বলেন, ‘বৈধ নাকি অবৈধভাবে টাকা এসেছে, সেটি নিয়ে কখনো প্রশ্ন করিনি। কখনো হাতে হাতে কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা পেয়েছি।’
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ডার্ড গ্রুপের মিডিয়া কমিউনিকেশন অফিসার বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের মূল গ্রুপের ব্যবসা আছে। ভারতীয় কর্মীকে কিভাবে সম্মানি দেওয়া হয়েছে, তা মূল গ্রুপ বলতে পারবে। আমরা কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
এদিকে, ‘সেইবই’-এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ইয়াসির আরাফাত বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ যেভাবেই টাকা পাঠানো হোক না কেন, এতে দেশের কী এমন ক্ষতি হয়েছে! বিষয়টি বড় মনে করলে বড় বিষয়, ছোট মনে করলে কিছুই না। তাছাড়া আদৌ নীহারেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে কেউ আমাদের হয়ে কাজ করেছেন কি না, আমার জানা নেই। কেউ নিজেকে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করলেই তো হবে না।’
উগ্রবাদী বইও বিক্রি হচ্ছে
‘সেইবই’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করছেন ধর্মীয় উগ্রবাদী বই। তাদের বইয়ের মধ্যে রয়েছে ওয়াহাবী মতবাদের বই, বিক্রি হচ্ছে ক্রুসেড সিরিজের বইও। এসব বই পড়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের পাঠকেরা চূড়ান্ত বিভ্রান্ত হতে পারেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। আশ্চর্যের বিষয় হলো— প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে কোনোরকম খোঁজখবর না নিয়েই বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এতদিন ধরে বইমেলায় তাদের স্টল বরাদ্দ দিয়ে আসছে, যা মেলার নীতিমালার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এমনকি চলতি বছরের বইমেলাতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘সেইবই’-এর সুসজ্জিত স্টল আছে (স্টল নম্বর ৭৫২)।
‘সেইবই’ থেকে সবচেয়ে বেশি রয়্যালিটি পাওয়া প্রতিষ্ঠান হলো পরশমণি প্রকাশনী। উগ্রবাদী বই প্রকাশ করার ফলে বাংলা একাডেমিতে তারা এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও স্টল বরাদ্দ নিতে পারেনি। অথচ সেই পরশমণি প্রকাশনীর ক্রুসেড সিরিজের বইগুলো দিব্যি বিক্রি করে আসছে ‘সেইবই’। এমনকি বইগুলোর প্রচার ও বিপণনে ব্যয় করছেন অঢেল অর্থ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরশমণি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও ক্রুসেড সিরিজের লেখক মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন বলেন, সেইবই-এর মাধ্যমে আমার বই বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি সবচেয়ে বেশি রয়্যালিটি পেয়ে আসছি।
বইগুলো উগ্রবাদিতা ছড়াচ্ছে কি না— জানতে চাইলে মুহিউদ্দীন দাবি করেন, ‘এগুলো আসলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের বিষয়। ইসলাম ধর্মের নানা বিষয় নিয়ে বই লেখা হয়েছে। তবে লেখক কীভাবে লিখছেন, আর পাঠক কীভাবে নিচ্ছেন— সেটি বুঝতে হবে।’
উগ্রবাদী বই বিপণন করে বইমেলায় ‘সেইবই’-এর স্টল বরাদ্দ নেওয়া বাংলা একাডেমির শর্ত পরিপন্থি কি না— জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখব। অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আইন না মেনে কর্মী ছাঁটাই
অন্যদিকে, আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘সেইবই’ বিনা নোটিশে কর্মী ছাঁটাই করে আসছে। এমনকি ছাঁটাই করার সময় কর্মীদের পাওনা বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয় না। পাওনা চেয়ে প্রতিষ্ঠানে অসংখ্যবার ধরনা দিয়েও ছাঁটাইয়ের শিকার কর্মীরা তাদের বকেয়া পাচ্ছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এর থেকে রেহায় পাননি। চাকরিচ্যুত কর্মীদের মধ্যে ‘সেইবই’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম, ডেপুটি ম্যানেজার নাফিস ইশতিয়াক, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার জাকির হাসান, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অঞ্জন আচার্য, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার দীপঙ্কর ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে আছেন। ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও একমাত্র নাফিস ইশতিয়াক (তিনি প্রতিষ্ঠানের মালিকের আত্মীয়) ছাড়া এখন অবধি কেউ তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা বুঝে পাননি। অথচ প্রতিষ্ঠানে চাকরির নীতি অনুযায়ী তাদের অন্তত তিন মাস আগে থেকে বিষয়টি অবহিত করার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তাছাড়া চাকরির অব্যাহতির সঙ্গে সঙ্গে তিন মাসের আগাম বেতনসহ আগের সব পাওনা পরিশোধেরও বিধান আছে। সেগুলোর কোনো কিছুই প্রতিষ্ঠানটি মানছে না।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটি থেকে চাকরি গেছে— এমন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, গত দুই-তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পাওনা বকেয়া চেয়ে অসংখ্যবার ধরনা দিয়েও কোনো ফল মেলেনি। কারও ক্ষেত্রে সময়টি আরও দীর্ঘ। ফলে একসময় হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা এবং টাকাগুলো আত্মসাৎ করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেননি কেন— এমন প্রশ্নে ‘সেইবই’-এর সাবেক কর্মী দেবজ্যোতি রুদ্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডার্ড গ্রুপ খুব বড় প্রতিষ্ঠান। তাদের বিশাল প্রভাব-প্রতিপত্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি অনেক আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সেগুলোর লাগাম টেনে ধরা দরকার।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘সেইবই’-এর সিদ্ধান্তদাতা হিসেবে আছেন মূলত ডার্ড গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ইয়াসির আরাফাত ও মিডিয়া কমিউনিকেশন অফিসার অনুপম কুমার পাল। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইতেমাদ উদ দৌলা’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সূত্রে অনুপম কুমার পাল ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং আড়াল থেকে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অর্থ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিনিময়ে প্রশাসনকে সামাল দেন। যদিও নিজেকে তিনি বরাবরই কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করে থাকেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার বিভাগ ‘র্যাভেন সিস্টেমস লিমিটেড’-এর প্রধান ও ‘সেইবই’-এর সমন্বয়ক ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করেছি। কাজ করতে গেলে দুয়েকটা ভুল-ত্রুটি হবেই।’
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা সকল অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ‘সেইবই’-এর প্রতিষ্ঠাতা নাবিল উদ দৌলা’র সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
সারাবাংলা/একে/টিআর
অবৈধভাবে ছাঁটাই উগ্রবাদী বই লেখকের রয়্যালটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেইবই সেইবই অ্যাপ হুন্ডিতে টাকা পাচার