বদলে গেছে বইমেলার চিরচেনা রূপ
৩০ মার্চ ২০২১ ২২:৫৫
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বদলে গেছে বইমেলার চিরচেনা রূপ। মূল প্রবেশপথেও এসেছে পরিবর্তন। স্টল ও প্যাভিলিয়নের সারিগুলো রাখা হয়েছে বেশ দূরত্বে, নেই অতিরিক্ত ভীড়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশ করতে হচ্ছে লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও পাঠকদের।
এবারের মেলায় বই প্রকাশ যেমন কম হয়েছে, তেমনি বেচাকেনাও কম বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। সাড়া না জগানো বইমেলায় লেখক, প্রকাশকদের মাঝে তাই এক ধরনের শূন্যতা দেখা যাচ্ছে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মেলা ঘুরে শিশুদের দেখা মেলেনি খুব একটা। শিশুতোষ বইও প্রকাশ হয়েছে কম। নতুন বই প্রকাশের সংখ্যাও খুবই কম। শিশুতোষ গ্রন্থকুটিরে এবার শিশুদের জন্য ১৫ থেকে ২০টি নতুন বই এসেছে। প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, অন্য বার ৪০ থেকে ৫০টি বই প্রকাশ করে থাকি। এবার আমাদের প্রকাশনী থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি বই প্রকাশ হয়েছে। মেলায় বিক্রিও নেই বললেই চলে। অন্যবারের তুলনায় শিশুদের আনাগোনাও কম। তাছাড়া এবার মেলায় শিশুপ্রহরের আয়োজনও ছিল না।
করোনার কারণে এবার বেশিরভাগ মানুষই মেলায় আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এমনকি কবি-লেখকদের আনাগোনাও ছিল কম। কথা হয় কবি সোয়েব মাহমুদের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে যে বইমেলা সেটা মার্চে করলে মাঠ খালি থাকে। এ বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের প্রকাশকেরা অবগত থাকলেও সেটার টেস্ট জানতেন না, এবারের বইমেলা তাই শুধু হাহাকারের প্রতিধ্বনি।’
কবি আরাফাত রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইমেলাতে এসে কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না এটা বইমেলা! মনে হচ্ছে এটা বিকাশমেলা। কারণ, করপোরেট ব্রান্ড বিকাশের বিজ্ঞাপনে বই-এর বিজ্ঞাপন হারিয়েছে।’
এবারের মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে লেখক মাহতাব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় এবার একটি স্টল থেকে অন্য স্টলের মধ্যে বেশ দূরত্ব রাখা হয়েছে। চাইলে সচেতনভাবে সাস্থ্যবিধি মেনে বই কেনার সুযোগ রয়েছে। তবে বেচাকেনা একেবারেই কম। তাই সরকারিভাবে প্রকাশকদের স্বার্থ দেখা উচিত। সরকারি গ্রন্থাগার ও স্কুল কলেজে সরকারিভাবে বই কেনা উচিত। তাহলে লেখকেদের সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশকরাও উপকৃত হবেন।’
এদিকে লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কোনো প্যাভিলিয়নে দিনে চার থেকে পাঁচটি বই বিক্রি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো লেখক ও প্রকাশক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সঙ্গত কারণেও তারা আর মেলায় আসছেন না। এদিকে ৩১ মার্চের পরে মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।’
জানতে চাইলে নওরোজ কিতাবিস্তানের প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর খান চৌধুরী চন্দন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলা বন্ধ করার পক্ষে আমরা নই। অনেক টাকা লগ্নি করেছি। করোনার কারণে স্টল বা প্যাভিলিয়নের অর্ধেক ভাড়া দিয়েছি এবার। বেচাকেনা একেবারেই খারাপ। ক্রেতাদের সাড়া নেই। এই টাইমে মেলাটা করা উচিত হয়নি। বাঙালি এখনো আবেগে ভাসে। মার্চ মাসে মেলা করা উচিত হয়নি। মেলা মানেই এখনো ফেব্রুয়ারিকে বুঝানো হয়। এবার তেমন কোনো নতুন বই প্রকাশ করিনি। পাঁচ থেকে সাতটি প্রকাশ করেছি মাত্র, যেখানে অন্যবার ১৫ থেকে ২০টি বই প্রকাশ করে থাকি।’
জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাকিটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।’
এদিকে, মেলার ১৩তম দিনে ১১২টি নতুন বই এসেছে। বিকেল ৩টায় মেলা শুরু হয়ে চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন সৌমিত্র শেখর, আসিফ এবং লুৎফর হাসান।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই