Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিসিক শিল্প পণ্যমেলায় স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ মার্চ ২০২১ ০৮:২৪

রাঙ্গামাটি: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দিন দিন। সংক্রমণের মাত্রা ছাড়াচ্ছে গত বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। জনসমাগম এড়ানোসহ এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনাও জারি করেছে সরকার। কিন্তু রাঙ্গামাটিতে স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন শুরু হওয়া বিসিক শিল্প পণ্যমেলাতে দেশের করোনা পরিস্থিতির কোনো প্রতিফলনই নেই। মেলায় অংশগ্রহণকারী কাউকেই মানতে দেখা যাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক, নেই শারীরিক দূরত্বের বালাই। এককথায় মেলায় ঢুকলে বোঝারই উপায় নেই, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।

বিজ্ঞাপন

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলেও এর মধ্যেই গত ২৫ মার্চ রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে শিল্পপণ্য মেলা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আয়োজন করেছে এই মেলা। এর মধ্যে সোমবার (২৯ মার্চ) সরকার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এতে নির্দেশনায় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রসহ যেকোনো স্থানে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। যেকোনো ধরনের মেলা আয়োজনও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এরপরও দিব্যি চলছে রাঙ্গামাটির শিল্প পণ্যমেলা। আগামী ৩ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ১০ দিনের এই মেলার। এখন পর্যন্ত আয়োজক কর্তৃপক্ষের এই মেলা নির্ধারিত তারিখের আগেই শেষ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে রাঙ্গামাটি বিসিক কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় খাবারের দোকানসহ ৫০টি স্টল বসেছে। এসব স্টলে যেমন অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা, তেমনি রয়েছেন রাঙ্গামাটির বাইরের বেশকিছু জেলার উদ্যোক্তারাও। পোশাক, অলংকারসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছেন তারা।

মেলা ঘুরে দেখা গেল, কাগজে-কলমে মেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্রেতা, এমনকি বিক্রেতাদের মুখেই নেই মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার দিকেও কারওই খেয়াল নেই। এ অবস্থাতেই মেলায় চলছে প্রায় জমজমাট বেচাকেনা। আর এসব বিষয় নিয়ে কোনো খেয়াল নেই মেলার আয়োজকদেরও। মেলার প্রবেশপথসহ দুয়েকটি জায়গায় ‘মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ’ পোস্টারের মাধ্যমেই তার কার্যক্রম সীমিত।

মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন মিঠু চাকমা। মেলায় কেউ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছেন না— জানালেন তিনি। মিঠু বলেন, মেলায় জায়গা খুব ছোট। ফলে গাদাগাদি করে মানুষজনকে ঘোরাফেরা করতে হচ্ছে। মাস্কও নেই বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখেই। ফলে এখানকার পরিবেশটি ঝুঁকিপূর্ণ। আজও (মঙ্গলবার) রাঙ্গামাটিতে ১০ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। ফলে সবার বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

যশোর থেকে মেলায় অংশ নিতে এসেছেন নারী উদ্যোক্তা মরিয়ম আক্তার। স্টলে তাকে দেখা গেল মাস্ক ছাড়াই বেচাকেনা করতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক পরলে ক্রেতাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলা যায় না। তাই স্টলে ক্রেতা থাকলে কথা বলার সুবিধার জন্য মাস্ক খুলে থাকি। তাছাড়া এমনিতে মাস্ক পরেই তো থাকি।

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ অবস্থায় মেলায় অংশ নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে সবকিছু থেমে ছিল। প্রায় একবছরই কোনো ব্যবসা করতে পারিনি। এখানে মেলার কথা শুনে এসেছি। খুব বেশি না হলেও মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। এখন মেলা কর্তৃপক্ষ মেলা বন্ধ করে দিলে তো কিছু করার থাকবে না। সেটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।

আরেক নারী উদ্যোক্তা অরশি’র স্বত্বাধিকারী ইসরাত জাহান অবশ্য নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ অস্বীকার করলেন। তিনি বলেন, দোকানদাররা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও যারা মেলায় আসছে, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখেছি। এটা নিয়ে তো আমাদের কিছু বলার নেই। আয়োজকদের বিষয়গুলো একটু কঠোরভাবে দেখা উচিত।

করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পরিমাণ কমছে বলে জানালেন ঢাকা থেকে আসা উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা। আলো ফ্যাশন হাউজের এই স্বত্বাধিকারী বলেন, মেলা তো বেশ কয়েকদিন হয়েই গেল। গত দুয়েকদিনে বিক্রি কমছে। এখন বাকি কয়েকদিন মেলা চললে যতটুকু বিক্রি হয়, করে চলে যাব।

মেলায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে এরকম জায়গায় সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। অনেকেই মাস্ক পরছেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না বলতে গেলে কেউই। আয়োজন কর্তৃপক্ষ আরেকটু কঠোর হলে হয়তো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি আরেকটু গুরুত্ব পেত।

পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখনই মেলা শেষ করার পরিকল্পনা নেই বলে জানাচ্ছেন বিসিক রাঙ্গামাটি সিআইডিপি কার্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টিতে তারা গুরুত্ব দেবেন বলেও জানালেন।

মো. ইকবাল বলেন, গত ২৫ মার্চ মেলা শুরু করেছি। করোনা সংক্রমণ কিন্তু সেভাবে বাড়তে শুরু করেছে এর পর থেকে। এখন যেহেতু আর অল্প কয়েকদিন মেলা রয়েছে, তাই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমে মেলা শেষ করার চেষ্টা করব আমরা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেলা বন্ধের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেননি রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানও। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে কাল (বুধবার, ৩১ মার্চ) সকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক রয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সেই বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। সেখান থেকে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন দিকনির্দেশনা আসবে। এলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মেলা বন্ধ করাও হতে পারে।

সারাবাংলা/টিআর

করোনাভাইরাস বিসিক শিল্প পণ্যমেলা স্বাস্থ্যবিধি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর