Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা ঝুঁকির মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ‘বিস্ময়’

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩১ মার্চ ২০২১ ১০:৫৮

ঢাকা: দেশে বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ। সংক্রমণ শনাক্তের পূর্বের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৯ ও ৩০ মার্চ পাঁচ হাজারের ওপরে শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দেশে ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি পরীক্ষা। সরকারের নির্দেশনার পরেও ২ এপ্রিলই পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও আত্মঘাতী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দুই মাস পরেও এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা অধিদফতর পরীক্ষা গ্রহণের সময় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এমন অবস্থায় এই পরীক্ষা গ্রহণকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরীক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন, এই সময়ে পরীক্ষা গ্রহণের ফলে যদি কারো মাঝে সংক্রমণ দেখা দেয় তবে তার দায় কে নেবে। একইসঙ্গে যারা বর্তমানে সংক্রমিত আছেন ও যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তারা কি আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আইসোলেশন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারবেন?

একইসঙ্গে কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ল্যাবের টেকনোলজিস্ট, এমএলএসএস সহ বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালের কর্মকর্তাদের। এজন্য ইতোমধ্যে তাদের কাছে অধিদফতর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারাও।

২ এপ্রিল দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা ছিল ৭২ হাজারেরও বেশি। এই শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের ২৭টি ভেন্যুতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ও কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সংখ্যা ১৯টি এবং ভেন্যু সংখ্যা ৫৫টি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরীক্ষার্থীদের ভাবনা

ঢাকা থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাওয়া পরীক্ষার্থী সোমা ইসলাম (ছদ্মনাম) সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের বাসা যাত্রাবাড়ি এবং আমার পরীক্ষার কেন্দ্র মিরপুরের বাংলা কলেজে। আমার পরিবারের দুইজন সদস্যের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আমাদের সবাইকে বলা হয়েছে আইসোলেশনে থাকতে। সেভাবেই আমরা আইসোলেশনে আছি। কিন্তু ২ এপ্রিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কিভাবে করব, সেটা এখনো বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, কেন্দ্রে যেতে হলেও তো আমাকে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি অন্যদের ঝুঁকির কারণ হতে পারি। আমার অ্যাজমা সমস্যাও আছে। এখন যদি আমিও সংক্রমিত হই তার দায় কে নেবে?

জামালপুর থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া যুথী তায়েবা (ছদ্মনাম) সারাবাংলাকে বলেন, আমার পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে ময়মনসিংহে। এক্ষেত্রে আমার পরীক্ষার আগের দিনই সেখানে যেতে হবে। সেখানে কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকায় আবাসিক হোটেলে থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে চাওয়া জাফর চৌধুরী (ছদ্মনাম) সারাবাংলাকে বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সঙ্গে আগে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখের খুব একটা বেশি গ্যাপ থাকতো না। কিন্তু এবার বুয়েটে পরীক্ষা হবে জুন মাসে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়ার পরেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে আমার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে। তারা আমাকে বলছে পরীক্ষা না দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু আমি তো পড়াশোনা করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই। তাই বুয়েট পরীক্ষায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার সাবজেক্টও সেভাবে চয়েস করা ছিল। এখন যদি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করতে পারি তবে আর কিছু বলার নেই। সংক্রমণের উর্ধ্বগতির কথা বিবেচনা করে ও আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে পরীক্ষাটা যদি দুই মাস পেছানো হয় তবে কী খুব বেশি সমস্যা হবে?

ঢাকা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে চাওয়া নন্দিতা পাল (ছদ্মনাম) সারাবাংলাকে বলেন, আমরা প্রতিদিন দেখছি দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। একইসঙ্গে ঢাকাতে আইসিইউর জন্য হাহাকার চলছে। এমন অবস্থায় আসলে যদি কেউ আক্রান্ত হয় তবে তার চিকিৎসার দায় ভার কে নেবে?

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. শিহাব চৌধুরী (ছদ্মনাম) সারাবাংলাকে বলেন, আজকে (মঙ্গলবার,৩০ মার্চ) আমাদের কাছে একটা চিঠি এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে যেন আগামীকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাড়ে নয়টায় সমবেত হই। এক্ষেত্রে প্রায় ৩০০ জনের অধিক চিকিৎসক আগামীকাল যাবে। দেশে বর্তমানে অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত ইতোমধ্যেই। যদি পরীক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে কেউ সংক্রমিত হয় তবে তার দায়টা আসলে কে নেবে তা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। আর ল্যাবের দায়িত্বরতদেরও পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে বলা হচ্ছে। তারা তো এমনিতেই ঝুঁকিতে থাকে বিভিন্ন স্থানের নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে। একইসঙ্গে আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের দেশের অনেক রোগীই কিন্তু উপসর্গহীন যারা সংক্রমণ কিন্তু ছড়াচ্ছে। এমন অবস্থায় আসলে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ বাড়ছে দেশে। এ অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি। কারণ এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। আর এই পরিস্থিতিতে তারা স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমার কাছে এটাকে মনে হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা হিসেবে। পূর্বে তাদের যে সমন্বয়হীনতা ছিল, তা এখানেও দেখা গেছে। কারণ এই মন্ত্রণালয় কিন্তু স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত। তারাই কিন্তু যুক্ত ১৮ দফা নির্দেশনা প্রদানের বিষয়েও।

তিনি বলেন, নির্দেশনায় বলা হয়েছে অফিস আদালতে ৫০ শতাংশ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। তাহলে পরীক্ষা কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবে সেখানে কি ৫০ শতাংশ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে? গণপরিবহনের বিষয়ে বলা হয়েছে ৫০ শতাংশ আসন শূন্য রাখার বিষয়ে। জনসমাগম সীমিত করতে বলা হয়েছে কিন্তু পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে তো তাদের অভিভাবকরা থাকবে যারা হয়তোবা গণপরিবহন ব্যবহার করেই আসবে। এমন অবস্থায় কিভাবে সীমিত করবে? কারণ সবার তো আর ব্যক্তিগত গাড়ি নাই।

তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার যে প্রস্তুতি তা মিলছে না। নানানভাবে তাই মনে হচ্ছে এটা আরেকটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২ তারিখে পরীক্ষা না হয়ে যদি আরও দুই মাস পরে হতো তাতে এমন কোনো ক্ষতি হতো না। সেক্ষেত্রে বরং পরীক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকিটা একটু কমানো যেত বলে মনে করি। এখন যদি কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয় কিন্তু দেখা গেলো সংক্রমিতও হয়েছে তবে তার দায়িত্ব কে নেবে?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক লিয়াকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণের বর্তমানে যে গতি দেখা যাচ্ছে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তো থাকবেই যে কোনো পাবলিক পরীক্ষাতেই। পরীক্ষার্থীরা তো আর আলাদা কোন জায়গা থেকে আসছে না। যেখান থেকে আসছে সেখান থেকেও সংক্রমিত হয়ে আসতে পারে। আবার পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পরেও সংক্রমিত হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি সবার নমুনা পরীক্ষা করে কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হতো তবে কিছুটা স্বস্তি হয়তো থাকতো। র‍্যাপিড টেস্ট করে যেমন অ্যান্টিজেন টেস্ট করে পরীক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারতো। কিন্তু তেমন কিছু তো হচ্ছে না।

তিনি বলেন, যে আইসোলেশন সেন্টারের বিষয়ে বলা হচ্ছে তা আসলে কতটুকু কার্যকর সে বিষয়ে ভাবনার অবকাশ থেকে যায়। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সময়ে যে কেউ যে কোনো সময়ে সংক্রমিত হতেই পারে।

দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগর পরামর্শক কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান সারাবাংলাকে বলেন, নির্দেশনায় দেখেছি উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক স্থানেই বলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে। আবার কিছু স্থানে দেখেছি সীমিত আকারে কার্যক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে। এখন পরীক্ষা তো আর সীমিত আকারে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী ও যারা কেন্দ্রে থাকবেন দায়িত্বে তাদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছেই।

তিনি বলেন, পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় এবং বের হওয়ার সময় যে চাপ থাকে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। যখন ঢুকবে আর বের হবে তখন যে ম্যাসিভ লেভেলে ইন্টারেকশন হবে সেটা তো অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। আর বাইরে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অপেক্ষা করবে নিশ্চিত। সেখানেও একটা গেদারিং হতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে আসলে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে একদিকে। সেটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার অন্যদিকে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত যেখানে সারা দেশের পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে আসলে পুরোটাই স্ববিরোধীতার মতন মনে হয় জাস্ট।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি ভাবছে?

সোমবার (২৯ মার্চ) দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-

১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো।

২. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৩. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৪. করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।

৫. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে।

এই নির্দেশনাগুলো উল্লেখ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এমন অবস্থায় সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে কিনা? যদি কেউ পরীক্ষা দিতে এসে সংক্রমিত হয় তবে তার দায় কে নেবে?

প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, পরীক্ষা বিষয়ক কমিটির দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ। তিনি বিএমডিসিসহ আরও অনেক কিছুর দায়িত্বে আছেন আর তাই এটার উত্তর উনি ভালো দিতে পারবেন। উনাকে একটু জিজ্ঞেস করুন।

এ বিষয়ে জানতে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মিটিংইয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ২৯ মার্চ ও ৩০ মার্চ দুই দিন তাকে ১০ বারের অধিক ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। একই সঙ্গে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, এ বিষয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার বৈঠক করেছে আর সেই হিসেবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় পরীক্ষার সকল প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ। সেজন্য আমাদের পরীক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে। আর আমরা তো এক কেন্দ্রে পরীক্ষা নেবো না। অনেকগুলো কেন্দ্রে হবে। তাই সবাই যদি ব্যক্তিগত ভাবে সচেতন থাকে তবে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে আসবে। আর আমাদের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছরের ভর্তি পরীক্ষাটি স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখতে সরকারের পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা শাখা, শিক্ষা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব শাখা মিলে টিমওয়ার্ক ও কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কাজ করছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের আশপাশে এলাকার স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখবে। পরীক্ষার আগে সামাজিকমাধ্যমগুলোতে যেন কোনো গুজব ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিশেষ শাখাগুলো কাজ করবে।

এর আগে ২৯ মার্চ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর অবস্থাতে আমরা নেই। আর সেই হিসেবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গত রোববার (২৮ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে। পরীক্ষার দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেনো সুষ্ঠুভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর আসলে আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। আমরা যখন বৈঠক শুরু করি তখন সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতি ছিল না কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়েছে। এমন অবস্থায়ও এলে পরীক্ষা পেছানো সম্ভব না। কারণ প্রশ্ন ছাপানো থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে যেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরাও তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সবার সঙ্গে কথা বলেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে কিছুটা সময় বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে মেডিকেলের বিভিন্ন পরীক্ষা কিন্তু অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় এই পরীক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছি।’

সংক্রমণের সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় যে কারো মাঝে তো সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকেই। আর তাই এবার প্রতিটা কেন্দ্রে থাকবে আলাদা আইসোলেশন কক্ষ। পরীক্ষা চলাকালে যদি কারো শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা কারও মাঝে কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকে তবে তাকে সেখানেই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের ও বাইরে অপেক্ষমান অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব জানান, শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবারের মেডিকেল প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সংখ্যা ১৯টি এবং ভেন্যু সংখ্যা ৫৫টি করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে ফটোকপি মেশিনের দোকান বন্ধ রাখা, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখাসহ অন্যান্য তৎপরতার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব জানান, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়ে অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা যথাসময়ে নির্ধারিত দিনে অর্থাৎ ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

সারাবাংলা/এসবি/এএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর