মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ওরিয়েন্টেশনেই নাই স্বাস্থ্যবিধির বালাই!
৩১ মার্চ ২০২১ ১৯:৩৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার প্রথমটি হলো- সবধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সবধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিয়ে/জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু ২ এপ্রিল দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের ওরিয়েন্টেশনেই নির্দেশনাটি উপেক্ষা করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ মার্চ) দেশে ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্র পরিদর্শক, পরীক্ষক ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পাওয়া চিকিৎসকদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। প্রায় তিন শতাধিক চিকিৎসককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ডা. মিলন অডিটোরিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। শুধুমাত্র ঢামেকই নয় বরং অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এই ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয় বলে জানা গেছে। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেই দেখা যায় নানা প্রতিক্রিয়া।
অনুষ্ঠানে দেখা যায়, অডিটোরিয়াম প্রায় পরিপূর্ণ। করোনা স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও সেটি মানা হয়নি। এমন অবস্থায় ওরিয়েন্টশনে অংশগ্রহণকারী একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি করি তাই সরাসরি কিছু বলতেও পারি না। কিন্তু ডিজিটাল সরকারের যে অগ্রগতি সেখানে দেশে করোনার এমন সংক্রমণ পরিস্থিতিতে খুব সহজেই অনলাইনে নির্দেশনা দেওয়া যেত। প্রয়োজনে সকলের কাছে মেইলেও নির্দেশনা পাঠানো যেত। এমনকি ভিডিও কনফারেন্সেও দেওয়া যেত নির্দেশনা। চিকিৎসকরা এমনিতেই করোনা সুপার স্প্রেডার আর এমন অবস্থায় এত চিকিৎসককে একসঙ্গে আনাটা আসলে ঝুঁকিপূর্ণ।’
ওরিয়েন্টশনে অংশগ্রহণকারী আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির যে ধারা তাতে আসলে সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর এমন অবস্থায় যদি আমাদেরই এভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ডেকে আনা হয় তবে সেটা অন্যদের জন্যেও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক উপসর্গহীন রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যাদের আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ নাই। এমন অবস্থায় যদি কারও মাঝে সংক্রমণ ছড়ায় তবে সেটা আরেক বিপদ বয়ে আনবে। কারণ এমনিতেই চিকিৎসক ঘাটতি রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে চিকিৎসা সেবা নিয়েও শঙ্কা বাড়বে।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাইকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বলা হয়েছে। এমন অবস্থায় যদি নির্দেশনা ভাঙা হয় তবে সেটা সেই কলেজের অধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন। আমাদের নয়।’
ওরিয়েন্টশন বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা ভঙ্গ হয় এমন কাজ তো আসলে করা যাবে না। তাই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েই এই ওরিয়েন্টশনের আয়োজন করা হয়েছে। সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে আসন বসার জন্য বলা হয়েছে। অডিটোরিয়াম তো অনেক বড়। চাইলেই সেখানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বসা সম্ভব।’
যদি কোনো চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে কি না? এবং সেখান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে সংক্রমণ ছড়াতে পারে কি না? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় এখানে যারা পজিটিভ হবেন তারা এমনিতেই আইসোলেশনে থাকবে। কেন্দ্রগুলোকে সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
অনেক উপসর্গহীন রোগী পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে, যাদের লক্ষণ না থাকায় পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। এমন কেউ যদি ওরিয়েন্টশনে থাকেন তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে কি না? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের এই পরিচালক বলেন, ‘এই ইস্যু তো অনেক বড়। তাই এটা নিয়ে কিছু বললাম না। এমনিতে আমাদের বলা হয়েছে যে, যারা কোভিড পজিটিভ তারা ডিউটি করবে না। আর সবাইকে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে যদি কেন্দ্রে প্রবেশ করাতে হয় তবে সেটা হবে লোম বাছতে কম্বল উজাড় হয়ে যাওয়ার মতো। সবাইকে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া বা দেওয়ানো কী সম্ভব? স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর চেয়ে বেশি তো আর সম্ভব হচ্ছে না।’
ওরিয়েন্টশন এভাবে না করে অনলাইনে কোনো নির্দেশনা দেওয়া যেতো কি না? এ বিষয়ে ডা. আহসান হাবিব বলেন, ‘এটা কেন্দ্রগুলোর বিষয়।’
এদিকে সরকারে নির্দেশনা ভাঙা বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম