Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে ৩৮৯ দিনে মৃত্যু ছাড়াল ৯ হাজার

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩১ মার্চ ২০২১ ২২:২০

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার। ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর ৩৮৯ দিন পর এসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৪৬ জনে।

এদিকে, ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫২ জন। এর আগে, সবশেষ গত ২৬ আগস্ট দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৫৪ জন মারা গিয়েছিলেন। এরপর গত ২১৭ দিনের মধ্যে আর কখনোই করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ পেরোয়নি। আর করোনা সংক্রমণ নিয়ে দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটেছিল গত বছরের ৩০ জুন, ওই দিন ৬৪ জন মারা গিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩১ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৩৫৮ জনের মাঝে, যা একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের নতুন রেকর্ড।

কোভিড১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ মার্চ। এরপর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৬ জন মারা গেছেন এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে। দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ঘটেছে যে কয়েকদিন, সে কয়েকদিনের তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো—

২০২০ সালের ৩০ জুন: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৬৪ জন মারা গিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর রেকর্ড এটিই।

২০২০ সালের ৫ ও ৭ জুলাই: এই দুই দিনই দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ৫৫ জন করে, যা এখন পর্যন্ত একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ২৬ জুলাই ও ২৬ আগস্ট: এই দুই দিনই দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ জন করে মারা গিয়েছিলেন।

২০২০ সালের ১৬ জুন: দেশে এদিন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান ৫৩ জন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে চতুর্থ স্থানে।

২০২১ সালের ৩১ মার্চ: দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের বছর পেরিয়ে এসে এদিন ৫২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে। দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে এই দিনটি।

করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু যেভাবে হাজার ছাড়াল

দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। সেদিন একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে। প্রায় একমাস পর ১৫ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা স্পর্শ করে ৫০-এর ঘর। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন।

একমাস পাঁচ দিন পর ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ। ১৫ দিনের মাথায় ১০ জুন এই সংখ্যা স্পর্শ করে হাজারের ঘর।

এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ আগস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার, ৪ নভেম্বর ছয় হাজার ও ১২ ডিসেম্বর করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু পেরিয়ে যায় সাত হাজারের ঘর।

এরপর ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যায় আট হাজার। আর আজ ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেল।

বয়সভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে যে ৯ হাজার ৪৬ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ষাটোর্ধ্ব মানুষদের মধ্যে, সবচেয়ে কম নবজাতকসহ অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সীদের মধ্যে।

এখন পর্যন্ত যে ৯ হাজার ৪৬ জন মারা গেছেন, তার মধ্যে পাঁচ হাজার ৬০ জনই ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ করোনায় মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক ৯৪ শতাংশই এই বয়সী। এছাড়া ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২ হাজার ২৩৫ জন (২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ) ও ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী এক হাজার ১৯ জন (১১ দশমিক ২৬ শতাংশ) মারা গেছেন।

মৃত্যুর হার কম বয়সীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম। এর মধ্যে নবজাতক থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সসীমার মধ্যে মারা গেছে ৩৮ জন (শূন্য০ দশমিক ৪২ শতাংশ), ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মারা গেছে ৬৭ জন (শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ)। এছাড়া ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১৭৮ জন (১ দশমিক ৯৭ শতাংশ) ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৪৪৯ জন (৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ) মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।

বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান

এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে মারা গেছেন পাঁচ হাজার ১৫২ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৪০ জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে, এই বিভাগে মোট মৃত্যুর শতকরা হার ১৮ দশমিক ১৩।আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৮২ জন মারা গেছেন খুলনা বিভাগে, মোট মৃত্যুর শতকরা হার ছয় দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৫০৪ জন (পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ), রংপুর বিভাগে ৩৭৪ জন (চার দশমিক ১৩ শতাংশ), সিলেট বিভাগে ৩২০ জন (৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ), বরিশাল বিভাগে ২৭৩ জন (তিন দশমিক ০২ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ২০১ জন (২ দশমিক ২২ শতাংশ)।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক দেশের তুলনাতেই কম ছিল। এটা অনেক কারণে হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আমাদের আরও বেশি সতর্কতা বাড়াতে হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োড়ের পরিমাণও বাড়াতে হবে। কারণ ভ্যাকসিন কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কেউ সংক্রমিত হলেও ঝুঁকির মাত্রা কমে আসবে। সবদিক বিবেচনায় বলব, সব স্তরে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পাশাপাশি ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারলে তবেই করোনায় মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব।

মৃত্যুহার কমাতে হলে সংক্রমণের মাত্রা কমানো এবং সংক্রমণের মাত্রা কমাতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শ দিলেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলেও মাস্ক পরার প্রবণতা ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অসুস্থ বোধ করলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটাও জরুরি, যেন প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করা যায়। এমনটা যদি করা যায় তবে হয়তো বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

করোনা সংক্রমণ করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু করোনাভাইরাস করোনায় মৃত্যু

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর