কম খরচে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি উদ্ভাবন আইসিডিডিআরবি’র
২৯ মার্চ ২০২১ ২০:১০
ঢাকা: বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা দূর করাসহ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম খরচে কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)। এ সম্পর্কিত একটি বহুদেশীয় গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ’দ্যা ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
সোমবার (২৯ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের তত্ত্বাবধানে ‘কন্ট্রোল অব ব্লাড প্রেশার অ্যান্ড রিস্ক অ্যাটেনুয়েশন— বাংলাদেশ, পাকিস্তান অ্যান্ড শ্রীলঙ্কা (কোবরা-বিপিএস)’ শীর্ষক গবেষণাটি চালিয়েছে বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি, পাকিস্তানের আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় ও শ্রীলংকার কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, দেশের গ্রাম অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। হৃদরোগজনিত বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার পেছনে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ। সে কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উচ্চরক্তচাপজনিত জটিলতা দূর করাসহ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে।
গবেষণায় উঠে আসা সাশ্রয়ী রক্তচাপ ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই পদ্ধতিটি আরও বড় পরিসরে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণাটি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনটি দেশের ৩০টি এলাকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালনা করা হয় বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জ জেলার ১০ উপজেলায় ৮৯৫ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। এর মধ্যে পাঁচ উপজেলার ৪৪৭ ব্যক্তিকে ‘ইন্টারভেনশন’ দলে যুক্ত করা হয়। প্রতি তিন মাসে একবার একজন সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী তাদের বাড়িতে গিয়ে ডিজিটাল মেশিনে রক্তচাপ মাপেন। এ সময় তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রা পরিবর্তনে স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া হয়। যাদের রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত বেশি ছিল, তাদের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পাঠানো হয়। সেখানে গাইডলাইন মেনে তাদের চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়।
তিন বছর ধরে চলা এই গবেষণায় প্রতিটি ইন্টারভেনশন ও প্রত্যেক রোগীর খরচ হিসাব করা হয়। সেই খরচ থেকে পুরো দেশের মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মাথাপিছু সম্ভাব্য খরচের হিসাবও বের করা হয়েছে। দেশব্যাপী এই কর্মসূচি চালু করতে কেমন খরচ হতে পারে, সেই বিষয়ে ধারণা দিয়েছে গবেষণাটি, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসূচিটি সম্প্রসারণের পথ দেখিয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষণা দলের প্রধান ডিউক-ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের হেলথ সার্ভিস ও সিস্টেম রিসার্চের অধ্যাপক তাজিন এইচ জাফর বলেন, একেকটি ইন্টারভেনশন এই কর্মসূচির বিস্তৃত পরিসর নিয়ে সম্ভাব্য ব্যয়ের ধারণা দিয়েছে। এসব সূচক স্বাস্থ্য পরিকল্পনাকারীদের বিকল্প বেছে নিতে সহায়ক হবে।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডিউক-এনএসইউর হেলথ সার্ভিস ও সিস্টেম রিসার্চের অধ্যাপক এরিক ফিঙ্কেলস্টেইন। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে মানুষের হৃদরোগ, স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। সাশ্রয়ী এই পদ্ধতিটি উভয় ক্ষেত্রে ভালো ফল বয়ে আনবে।
বাংলাদেশে এই গবেষণার প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বি’র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের অসংক্রামক রোগ শাখার প্রধান আলিয়া নাহিদ বলেন, বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। এসব দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা খরচও বেশি। কোবরা-বিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। ফলে এসব রোগের প্রকোপ কমবে। বাংলাদেশে প্রচলিত সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে এটি সহজে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এই কর্মসূচি জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা গেলে এটি কোভিড মহামারির সময় চিকিৎসকদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগজনিত জটিলতা কমাতে সহায়তা করবে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর