Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার ধাক্কা: বাড়েনি বৈদেশিক অর্থের খরচ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ এপ্রিল ২০২১ ০৮:২১

ঢাকা: করোনার ধাক্কায় এখনও বাড়েনি বৈদেশিক অর্থের খরচ। ফেব্রয়ারি মাস পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ২৪ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত তিন বছরে একই সময়ের তুলনায় এটি কম খরচ।

চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। তবে এরই মধ্যে কাটছাঁট করা হয়েছে বরাদ্দও। জুলাই থেকে ফেব্রয়ারি চলতি অর্থবছরের ৮ মাসের বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০ কোটি টাকা। কিন্তু এই বরাদ্দ থেকে এক টাকাও খরচ হয়নি। এরপরই রয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। এ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার টাকা, যা বরাদ্দের ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৯৮ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে চার কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (থোকসহ) জন্য বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৭৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে চার কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা বরাদ্দের ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারির প্রভাব এখনও আছে। অনেক প্রকল্পেরই পরামর্শক ব্যয় ধরা আছে। কিন্তু কোভিডের কারণে তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। ফলে তাদের জন্য অর্থব্যয় করা যায়নি। এজন্য বৈদেশিক সহায়তার একটি বড় অংশই অব্যয়িত আছে। এরকম বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক সহায়তা ব্যয় এখনও আগের পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুরোপুরি গতিশীল হয়নি।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের ধাক্কায় পড়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। এখনও সেই প্রভাব কাটানো সম্ভব হয়নি। আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি উন্নয়ন প্রকল্পের গতি। ফলে বৈদেশিক সহায়তার কাঙ্খিত ব্যয় না হওয়ায় ইতোমধ্যেই কাটছাট করা হয়েছে বরাদ্দ। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তবে ফেব্রয়ারি মাসের যে অগ্রগতির চিত্র সেটি মূল এডিপি থেকে ধরা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত কয়েক অর্থ বছরের এডিপিতে ৮ মাসের বৈদেশিক সহায়তা ব্যয়ের অবস্থা হচ্ছে—২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ২৫ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৮ মাসে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করেছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পেরেছে শতভাগ। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যয় করেছে বরাদ্দের ৯৯ দশমিক ৪৪ ভাগ। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ৯৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। মন্ত্রিপরিদ বিভাগ ৮৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় (থোক বরাদ্দসহ) ৮০ দশমিক ৪২ শতাংশ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পেরেছে ৭৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আইএমইডি ৬৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তা ব্যয় করেছে মোট বরাদ্দের ৫৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেজে/এসএসএ

করোনা বৈদেশিক অর্থের খরচ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর