‘উৎপত্তি উৎস ঠেকাতে না পারলে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে’
১ এপ্রিল ২০২১ ০৯:০২
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের যেসব স্থান থেকে করোনা সৃষ্টি হচ্ছে সেই সব স্থান চিহ্নিত করে করোনার উৎপত্তি উৎস ঠেকাতে না পারলে করোনা নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যেতে পারে। এমন অবস্থায় প্রতিদিন যদি ৫শ’ থেকে এক হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে তাহলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা দেওয়া যাবে না।
বুধবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় অনলাইন জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্রমাগত অবনতি, সার্বিক পরিস্থিতি, হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা ও শয্যা বাড়ানোর বিষয়ে বিপিএমসিএর সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, গত মাসে সংক্রমণের হার ২ শতাংশ ছিল, মৃত্যু হার ছিল ৫ শতাংশ, আর সুস্থতার হার ছিল ৯২ শতাংশ। আমরা করোনাকে প্রায় মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সে সময় আমরা খুব বেশি আনন্দিত ও খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছিলাম, পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছিলাম। যে কারণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে সংক্রমণের হার ১৮-১৯ শতাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সংক্রমণের হার প্রায় ২০ শতাংশে চলে গেছে। এখন দিনে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।
তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য যা করার এখনই করতে হবে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে যা করতে হবে তা হচ্ছে, যে যে স্থান থেকে করোনা সৃষ্টি হচ্ছে সেসব স্থানে এখনই জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এখনই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে নিকট ভবিষ্যতে করোনাকে আর খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর ১৮টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সব পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল, যানবাহনসহ অন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিয়ে-শাদি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিকনিক আয়োজন বন্ধ রাখতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতের উদ্যোগে সরকারিভাবে দ্রুততার সঙ্গে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় আড়াই হাজার বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪০টি নতুন আইসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই মহাখালী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) হাসপাতালে ২৫০ বেড এসডিইউ ও ৫০ বেড আইসিইউসহ ১২০০ বেডের হাসপাতাল রেডি হয়ে যাবে। এছাড়াও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি), জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১০০ করে বেড বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় শুরু থেকেই বেসরকারি হাসপাতালগুলো আমাদের সঙ্গে ছিল, করোনার এই ঊর্ধ্বভাব বিবেচনায় আরও ১৫০০ বেড বাড়ানোর অনুরোধ করছি। যদি আপনারা এগুলো বাড়াতে পারেন, তাহলে আমরা সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ৪ হাজার বেড নতুন করে চালু করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগী রাখার জায়গা নাই। আইসিউগুলোতেও জায়গা নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে সেবা দিতে। কোনো রোগী যেন হাসপাতাল থেকে ফিরে না যান সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিদিনই যদি এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকে, তাহলে তো পুরো ঢাকাই করোনা রোগীময় হয়ে যাবে।
সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আইসিইউ যতোই বাড়াই, যদি আপনারা স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, সতর্ক না হোন, তাহলো কোনো লাভ হবে না। আর আমরা তো চাইলেই আইসিইউর সংখ্যা বাড়াতে পারবো না। কারণ দক্ষ জনবল না থাকলে তো আইসিইউ বাড়িয়ে লাভ নেই। দক্ষ জনবল তো অল্প সময়েই তৈরি হয়ে যায় না। আমরা চেষ্টা করছি। আপনারাও সতর্ক হোন।
এসময় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বিপিএমসিএর উপদেষ্টা ডা. মো. এনামুর রহমান, বিপিএমসিএর সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলমসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ