ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে চিকিৎসক-পুলিশ মুখোমুখি, তদন্তের নির্দেশ
২ এপ্রিল ২০২১ ০৩:২৬
ঢাকা: গাজীপুরের টঙ্গীতে ২০১৯ সালে আল আমিন নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় চিকিৎসক দেরিতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া এবং পুলিশের পক্ষে প্রতিবেদনটি দেরিতে গ্রহণ দেখানোর অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেরিতে দেওয়া কিংবা দেরিতে গ্রহণের কারণ এবং এ ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) আল আমিন হত্যা মামলার আসামি হাবিবুর রহমানের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন আদেশ দেন। আদালত আসামির জামিন আবেদন খারিজ করে পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আরাফাত কাউসার।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, গাজীপুরের আল আমিন হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ও শাহবাগ থানা পুলিশের গাফিলতির বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করতে ঢামেক পরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত আসামির জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু আদেশ না দিয়েও পারি না। আমাদের তো কাজ করতে হয়। যে যেখানে দায়িত্বরত আছেন, তিনি যদি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করেন, তবে তো মুশকিল। এই মামলায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর চার-পাঁচ মাস পর রিসিভ (গ্রহণ) দেখাচ্ছে। এখানে গাফিলতি আছে, অনিয়ম হয়েছে। এটা তদন্ত হওয়া দরকার।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর আল আমিনকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনায় পরদিন নিহতের বড়ভাই বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেন। আল আমিনের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢামেক হাসপাতালে।
এদিকে, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই মধ্যে মামলার আসামি হাবিবুর রহমান হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। এই জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে দেড় বছরেও মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) তলব করেন আদালত।
আদালতের তলবে তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টে হাজির হয়ে আদালতকে জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে তিন বার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ময়ানাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় গাজীপুরের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদনও করেছিলেন গত ২৪ জানুয়ারি। এরপরও ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্ট ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে তলব করেছিলেন।
আদালতের এই আদেশে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে জানান, তিনি ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী শাহবাগ থানা পুলিশের বরাত দিয়ে আদালতকে জানান, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। ওসি জানিয়েছেন, তারা গত ২৪ মার্চ প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেছেন।
দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী এমন বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত। মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে আদালত বলেন, আমরা এর আগে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর একটি কপি থানায়, আরেকটি কপি সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে আদেশ দিয়েছিলাম। এই আদেশ সংশ্লিষ্ট সবখানে পাঠাতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও পুলিশের আইজিকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা আজও কার্যকর হয়নি। এটা হলে এ রকম ঝামেলা হতো না। এরপর আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর