‘দুর্বার গণআন্দোলনের’ ডাক বিএনপির
২ এপ্রিল ২০২১ ১৭:১৬
ঢাকা: বর্তমান সরকারকে সরাতে ‘দুর্বার গণআন্দোলনের’ ডাক দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেলে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ডাক দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজত ইসলামের আন্দোলন ও এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হতাহতের দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই অবৈধ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘অন্যথায় দুঃশাসন, দুর্নীতি ও গণতন্ত্র হত্যার দায় নিয়ে এই অবৈধ সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এই দানবীয় কর্তৃত্ববাদী দখলদার বেআইনি সরকারকে সরিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে দেশের সব গণতান্ত্রিক দল সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানাচ্ছি,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে মহান স্বাধীনতা দিবসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে এবং সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় সাত জনকে হত্যা এবং পরের দুই দিনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ মিছিলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল, গুলি করে মোট ২০ জনকে হত্যা জাতির জীবনে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় তৈরি করেছে।’
‘প্রমাণ হয়েছে যে, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের বেআইনি ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের সব মূল্যবোধকে ধ্বংস করে, একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হীন চক্রান্ত করছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনের সরকারি বাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক হত্যা, আওয়ামী এজেন্টদের দ্বারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এবং সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য অডিও নাটক সাজিয়ে বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার, রিমান্ড নেওয়া ও সারাদেশে পুনরায় হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করার হীন পরিকল্পনা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো দেখলেই স্পষ্ট হবে যে, সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বিরোধী দলকে পুনরায় মামলা মোকদ্দমার বেড়াজালে আটকে গণতন্ত্র উদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে ব্যাহত করা, দমন করা।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আটটি মামলায় কয়েক হাজার আসামি, চট্টগ্রাম (হাটহাজারীতে) কোনো মামলা করা হয়নি। অথচ বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশের হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাতসহ প্রায় ২৪ জনকে গ্রেফতার যার মধ্যে ১৪ জন নারী। এরই মধ্যে ডা. শাহাদাতসহ প্রায় ১৫ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং পাঁচজন নারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘হেফাজতের হরতালের দিনে রায়ের বাজার বাসা থেকে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওই দিনই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জনৈক আরমানের সঙ্গে তার কথোপকথনের একটি বানোয়াট অডিও প্রচার করে, যা সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা।’
তিনি বলেন, ‘নিপুণ রায় চৌধুরী একজন কর্মরত আইনজীবী, একজন সক্রিয় মানবাধিকারকর্মী এবং সচেতন রাজনীতিক। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি ষড়যন্ত্রমূলক, সাজানো তৈরি করা ও তাকে মিথ্যা দোষারোপ করার একটি জঘন্য চক্রান্ত।’
সারাবাংলা/এজেড/একে