হেফাজতের বিরুদ্ধে বিবৃতিদাতাদের বিচার হবে: বাবুনগরী
২ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভারত নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেছেন, দিল্লির গোলামি করার জন্য আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এদেশ স্বাধীন করেনি। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে এদেশের জনগণ সবসময় প্রস্তুত। কারও হুমকি-ধমকি এদেশের তৌহিদি জনতা পরোয়া করে না।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে হেফাজতে ইসলামের দেশব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ডাকবাংলো চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বাবুনগরী এসব কথা বলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে হতাহতদের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতের আমীর বলেন, ‘আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সার্বভৌমত্ব ও ইনসাফ কায়েমের জন্যই রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হতে হবে সম-মর্যাদার ভিত্তিতে।’
‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনে পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘খুনি কর্মকর্তাদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মোদিকে খুশি করার জন্য যারা দেশের নিরপরাধ প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করতে দ্বিধা করে না, তারা জালিম ও অত্যাচারী। যারা ধর্ম ও মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, তারা জনগণের কাছে সবসময় ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত।’
হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে ১১ বিশিষ্টজনের দেওয়া বিবৃতির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাবুনগরী বলেন, ‘এই বিবৃতি আধিপত্যবাদের নির্লজ্জ দালালির প্রমাণ বহন করে। পুলিশের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা না জানিয়ে একতরফাভাবে প্রতিবাদী জনতার গণপ্রতিরোধকে তথাকথিত ‘তাণ্ডব’ আখ্যা দিয়ে উনারা গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
ভবিষ্যতে বিবৃতিদাতা ১১ বিশিষ্ট নাগরিকের বিচার করার হুমকি দিয়ে বাবুনগরী বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হয়েছে। পাকিস্তান এখন অতীত ইস্যু। উনারা এখনও পাকিস্তানি জুজুতে আক্রান্ত হয়ে আছেন। পাকিস্তানি জুজুকে অতিক্রম করে সামনে এগোতে পারছেন না। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এদেশ কখনোই পাকিস্তানের পথে যাবে না। কিন্তু আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করার চক্রান্ত আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে নস্যাৎ করে দেব।’
সংঘাতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতের আমীর।
হেফাজতের হাটহাজারী উপজেলার সভাপতি শোয়াইব জমিরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হোসাইন, যুগ্ম সম্পাদক এমরান সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক মুহাম্মদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, সহ অর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক জুনাইদ বিন ইয়াহইয়া।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে নগরীর আন্দরকিল্লায় শাহী জামে মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সমাবেশ শেষে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে তারা আর মিছিল করেনি। বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে হাটহাজারীতেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস