অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ
৪ এপ্রিল ২০২১ ১২:৩৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই আমরা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাটাকে (এনএসআই) আরও শক্তিশালী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। কারণ আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে। কাজের পরিধি বেড়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে, কাজেই নিরাপত্তাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রোববার ( ৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) নবনির্মিত বহুতলবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পর এই সংস্থাটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ছিল জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর মার্শাল’ ল জারি করা হয় এবং একের পর এক মিলিটারি ডিটেকটররা ক্ষমতায় আসে এবং এই সংস্থার গুরুত্বটাও অনেকটা হারিয়ে যায় এবং এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। যার ফলে সংস্থাটাকে অন্যভাবে ব্যবহার করা হতো। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের দমন করা বা নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে কিন্তু দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, জাতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই সংস্থাটার যে দায়িত্ব সেটা অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন আমরা আবারও এ সংস্থাটাকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেই এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেই এবং পেশাগতভাবে এনএসআই দক্ষতা অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন এই সংস্থাটি আরও গুরুত্ব পায়, শক্তিশালী হয় দুভার্গে্যর বিষয় হলো ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে, তখন আমরা যে সমস্ত কার্যক্রম শুরু করেছিলাম এই সংস্থাটাকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সেগুলো আবার স্তিমিত হয়ে যায়। এই সংস্থাটকে আরও নানানভাবে ব্যবহার শুরু করে। যা আসলে তাদের কাজের পরিধির মধ্যে পড়ে না। তাদের নিজস্ব একটা বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে।’
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পুনরায় গোয়েন্দা সংস্থাটির উন্নয়নে কাজ করার যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কাজেই ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই আমরা এই সংস্থাটাকে আরও শক্তিশালি করার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি এবং আমরা নতুন পদ সৃষ্টি করি। কারণ আমাদের জনবল বাড়ছে। কাজের পরিধি বেড়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। কাজেই নিরাপত্তাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া বিএনপি জামায়াত জোট ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় এদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের উত্থান ব্যাপকভাবে ঘটে। মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে চলে যায়। কাজেই আমরা এই সংস্থাটাকে আরও শক্তিশালী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।
শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘একটা বিষয় আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি এবং এইসব ব্যাপারে আপনাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের জানমাল রক্ষা করা, জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করণীয় সেটা আপনাদের করতে হবে।’
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক বা দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। সে বিষয়ে আপনাদের অবশ্যই যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেটাই আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই এনএসআই’র প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করবেন। আপনাদের কর্তব্য পালনের সময় যথাযথ শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনারা যদি আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, অবশ্যই বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ, ইনশাল্লাহ ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ।’
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাটির সদস্যদের কর্মস্পৃহা মনোবল বৃদ্ধির জন্য ২০০৯ সালের পর বিভিন্ন পদে মোট ১ হাজার ৬০১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যা আগে কখনো করা হয়নি বা এদিকে কেউ যত্ন নেয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির কাঠামোটা পুনর্গঠন করা, পদোন্নতির নীতিমালা তৈরি করা, বিধিমালা প্রণয়ন করে নিয়মিতভাবে যারা দায়িত্বরত থাকবেন, তাদের কর্মস্পহা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/একে