স্ববিরোধী নিষেধাজ্ঞায় গ্রামে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা
৪ এপ্রিল ২০২১ ২২:৪০
ঢাকা: দেশে আগের সব রেকর্ড ভেঙে বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। এমন অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানারকম পদক্ষেপ। ২৯ মার্চ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৪ এপ্রিল সংক্রমণ বিস্তার রোধে এক সপ্তাহের জন্য ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করেছে সরকার। এর আওতায় মূলত নাগরিকদের চলাচল ও জনসমাগম এড়ানোর জন্যই বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ধাপে সরকারের ১৮ দফা ঘোষণায় ছিল না সেটি বাস্তবায়নের কোনো নির্দেশনা। আবার দ্বিতীয় দফায় যেভাবে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপের কথা বলা হয়েছে সেটি আসলে পরিস্থিতির সঙ্গে স্ববিরোধী। কারণ বইমেলা খোলা রেখে বা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল খোলা রেখে জনসমাগম এড়ানোর ভাবনা কতটুকু বাস্তবসম্মত সেটা ভাবনার বিষয়ে। সেইসঙ্গে দেশে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে মানুষ যেভাবে গ্রামের দিকে ছুটে যাচ্ছে তাতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর শুধুমাত্র নির্দেশনা দিয়েই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, বরং এগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থাপনাও।
দেশের কোভিড-১৯ বিষয়ক জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে আসলে কোনো সমন্বয় নেই। এটি না থাকার কারণে এ ধরণের প্রজ্ঞাপন বের হয়। যেখানে থাকে অসম্পূর্ণতা এবং এই নিষেধাজ্ঞার কী আউটকাম হবে তা নিয়ে কোনো চিন্তা করা হয় না। একটু আগে নির্দেশনা দেখার পরে অনেকেই আমার কাছে জানতে চাচ্ছে, বইমেলা কেন খোলা রাখছে? আমি বলেছি এ বিষয়ে আসলে আর কিছু বলার নেই। সবই বন্ধ করা হচ্ছে, কিন্তু বইমেলা খোলা রাখার বিষয়টা হয়তোবা এখনো সরকারের পরিকল্পনায় আসেনি। হয়তোবা কাল বা পরশুর দিকে আবার বন্ধ করা হবে। যেখানে বাংলা একাডেমির সভাপতি নিজেই কোভিড-১৯ সংক্রমিত সেখানে এটা নিয়ে আসলে আর কিছু বলার নেই।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য থেকে আমাদের দেশে ফ্লাইট চলবে। কিন্তু দেশটি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে আমাদের দেশ থেকে যাত্রী না নেওয়ার। আবার যুক্তরাজ্য বা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট খোলা থাকবে কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তাহলে যারা আসবে তারা বাড়ি যাবে কীভাবে? এটা আরেকটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ নির্দেশনা। এগুলো হয়তো বিভিন্ন জায়গায় লেখা হয় আর তখনই নির্দেশনা পরিবর্তন হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো দেওয়া হয়েছে তার পরে একটা হুলস্থুল লেগে যাবে যেখানে বিশৃঙ্খলার চরম অবস্থায় পৌঁছাবো। বহু লোক যারা ঢাকায় এসেছে কাজ করতে বা ছোট ব্যবসা করতে বা বিভিন্ন অফিসে কাজ করতে তারা এখন কী করবে? গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় তারা এখন গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবেই। আর তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে গ্রামেও। আগে যাও কিছু ছিল সদর বা জেলা শহরে। এখন সংক্রমণ সবখান থেকে গ্রামে ছড়াবে। আমাদের এই ধরণের সিদ্ধান্তগুলো যে কী পরিমান আত্মঘাতী তা নিয়ে আসলে আর কিছু বলার নেই।’
দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে নিষেধাজ্ঞাগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আগেও ছিল। বলা হয়েছে- হোটেল-রেস্তোরা খোলা রাখা যাবে; তবে সেখান থেকে কেবল খাবার নেওয়া যাবে। কিন্তু বসে খাওয়া যাবে না। তার মানে মানুষ রাস্তায় চলাচল করে সেই খাবার নিতে যেতে পারবে। কাঁচাবাজারে খোলা থাকবে। তাহলে লোকজনের মধ্যে যারা মাস্ক পরে না তারা তো ঘুরবে ও সংক্রমণ ছড়াবে। তবে যদি এক্ষেত্রে সঠিকভাবে মনিটর করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে মাস্ক পরার রেট বাড়ার সম্ভাবনা আছে। নির্দেশনাগুলো মনিটরিং করা না হলে কার্যকারিতা হারাবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্দেশনার কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক। যেমন বিদেশ থেকে যাত্রী আসতে পারবে। সেই যাত্রী আসার পরে বাড়ি যাবে কীভাবে যদি গণপরিবহন না থাকে? বইমেলা চালানোর বিষয়ে দেখলাম একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গণপরিবহন না চললে বইমেলায় তাহলে কারা যাবে? গণপরিবহণের আসলে সংজ্ঞা কী? রিকশা কী গণপরিবহনের আওতায় পড়বে? তাহলে কী সবাই রিকশায় যাবে না হেঁটে যাবে বইমেলায়? কারা যাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনার পরে অনেককে দেখলাম ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। টিভিতে দেখছিলাম অনেকে বলছে, সাতদিন যেহেতু বের হতে পারব না, তাই গ্রাম থেকে ঘুরে আসি। তার মানে হচ্ছে, ঢাকা শহরে এখন যে অতি সংক্রমণ মাত্রা আছে সেটি এখন সারাদেশে ছড়াবে।’
নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিস্থিতিটা আসলে আনম্যানেজেবল হতে যাচ্ছে। আমরা এতদিন থেকে বলছি মাস্ক পরেন। কিন্তু সেটা কতদিন মনিটর করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়েছে কিন্তু সেটা কি প্রতিদিন হয়েছে? এখন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে আর সেক্ষেত্রে কতটুকু মনিটর করা হবে সেটার উপরে নির্ভর করবে অনেক বিষয়। আবার অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে অনেকগুলো দেশ থেকে বিমান চলাচল করতে পারবে না বলে জানান হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিমান প্রবেশ করতে পারবে। অথচ যে ভ্যারিয়েন্টের জন্য এত কিছু সেটা যুক্তরাজ্যেরই। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আসলে কিছু বলার নাই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আসলে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেখানে লকডাউন শব্দকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেটা আসলে যে উদ্দেশ্যে তা কতটুকু সফল হবে এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এই নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে সংক্রমণের বিস্তার রোধের। মূল বিষয়টা হচ্ছে মানুষের কাছ থেকে মানুষের মাঝে ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করা। অর্থাৎ মানুষকে এক জায়গায় থামানো এবং তার পরে তাকে শনাক্ত করে আলাদা করা। এক্ষেত্রে প্রথম বিষয়টাই হচ্ছে মানুষকে ঘরে ঢোকাতে হবে। এরপরে তার নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। যাদের উপসর্গ আছে তাদের সবার নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। এরপরে যারা সংক্রমিত তাদের আলাদা করতে হবে যাতে তাদের কাছ থেকে আর না ছড়ায়। এই জন্যেই কিন্তু লকডাউন ব্যবস্থাপনা।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে লকডাউন করে তার প্রভাব দেখা যাবে ১৪ দিন সময়সীমায় এবং ২১ দিন সময়সীমা পরে। এই ২১ দিন পরে মৃত্যুর হারের উপরে প্রভাব ফেলবে। সুষ্ঠু লকডাউন করা হলে ১৪ দিনের মাথায় সংক্রমণের মাত্রা অনেকটা কমে যাবে। এক্ষেত্রে মানুষকে ঘরে আটকাতে না পারলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এক্ষেত্রে ১৪ দিনের বেশি মানুষকে ঘরে রাখতেই হবে। এক্ষেত্রে মানুষকে প্রথম চার থেকে পাঁচ দিন মাস্ক পরাতে হবে যাতে অন্তত ঘরে আর সংক্রমণ না ছড়ায়। এটা হলো মোদ্দা কথা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশনা। পুরো পৃথিবীতে প্রায় সব দেশেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা সফল হয়েছে তাদের উদাহরণই ব্যবহার করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি যে বহির্মুখী যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। কারণ এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে মূলত বড় শহরগুলোতে। সেখান থেকে মানুষ যদি গ্রামে যায় তবে সংক্রমণ বিস্তার লাভ করবে আবার। অতএব এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কারণ আজকের এই নির্দেশনার পরে যারা গ্রামের বাড়ি যেতে চাচ্ছে তাদের আটকানোর ব্যবস্থা করে অন্তত ১৪ দিন তার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ লেলিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ ভাইরাসের সুপ্তিকাল হচ্ছে ১৪ দিন। অর্থাৎ একজনের শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করলে ১৪ দিন পর্যন্ত এটি ছড়াতে পারে। যে কারণে করোনাভাইরাসের জন্য লকডাউনের ন্যুনতম সময় হওয়া উচিত দুই সপ্তাহ। এক সপ্তাহ সময়ে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আংশিক নিয়ন্ত্রণ হবে, পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ঘটবে না। ভিড় হয়, জনসমাগম হয় এমন কিছু খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ অথবা এই জাতীয় পরিবহন যদি বন্ধ রাখা হয় তবে দুটি বিষয় হতে পারে। প্রথমটি হলো, করোনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কোনো বাধা তৈরি হবে না। দ্বিতীয়ত মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। মানুষজন যখন ভিড় করে ঘুরবে তখন করোনা ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি আরও বেশি তৈরি হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরও দেখেছি মানুষজন সাধারণ ছুটির সময়ে দল বেঁধে উৎসব করতে গ্রামে গেছে। আমরা বলেছিলাম, এটি করলে করোনা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। বর্তমানে সেই গ্রামে যাওয়ার উৎসব যদি তৈরি হয় তবে করোনা সংকট বা দুর্যোগ আমাদের দেশে যে কয়টা জেলা শহরে রয়েছে তার থেকে বাকি শহরে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষের মৃত্যুর ভোগান্তি আরও বাড়বে। অতএব লকডাউনের নামে এমন কিছু না করে যদি শুধু নিয়ন্ত্রণের জায়গাতেই থাকা যেত তবে বেশি ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্য থেকে যারা দেশে আসছে তাদের আমরা দেশে আসার অনুমতি দিচ্ছি। কিন্তু সেই দেশটা কিন্তু আমাদের লোকজনকে নিচ্ছে না। তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপের সব দেশের ফ্লাইট আমরা বন্ধ করেছি, কিন্তু যুক্তরাজ্যের সঙ্গে করিনি। অথচ আমাদের দেশে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টই ছড়িয়েছে। এটি স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’
লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলা একাডেমির সভাপতি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আক্রান্ত। উনারা কিন্তু সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানার পরেও আক্রান্ত। তারপরেও যদি বলা হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা খোলা রাখতে হবে তবে সেটি আসলে স্ববিরোধিতা বলা যায়। অনেকটা এমন যে এক হাতে বিষের পেয়ালা ও অন্য হাতে অমৃত।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক ডা. শাহরিয়ার রোজেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষকে গ্রামমুখী হওয়া থেকে বিরত রাখা। লকডাউনকে মানুষ সাধারণ ছুটি মনে করে গ্রামের বাড়িতে ছুটলে চরম সর্বনাশ হয়ে যাবে। কারণ তারা ঢাকা শহর থেকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট। দেখা গেলো কেউ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইউরোপের তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট হলো এই যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট। যা ৩০-৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এবং ৫৫ শতাংশ বেশি প্রাণঘাতী। এক্ষেত্রে যদি এটি গ্রামে কেউ বয়ে নিয়ে যায় তবে সেটি হবে আত্মঘাতী। যেকোনো মূল্যে মানুষকে তাই গ্রামমুখী হওয়া প্রতিহত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম আগে কিন্তু আজ বাস্তবে দেখলাম বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য মানুষের তাগাদা বিভিন্ন বাস স্টেশন ও অন্যান্য স্থানে। আমি বিগত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দেশের লকডাউন এবং পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি নিয়ে বিশ্লেষণ করছি- এভাবে টিউবলাইটের অফ-অন বাটনের মতো কেউ লকডাউন করে না। যেটা আজকে বাংলাদেশে হয়েছে। আগেও এমনট দেখা গেছে। কিন্তু দুর্বল ভ্যারিয়েন্টের কারণে হয়তোবা বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বারের বিষয় কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ‘
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্তর-ভিত্তিক (step-wise) প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে যেখানে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সব জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। লকডাউন দেওয়া হয় একেবারে শেষ পর্যায়ে। এপ্রিলের ২ তারিখে ১ লাখ ২০ হাজার পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মিলনমেলা এবং ৫ তারিখ থেকে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা।’
ডা. রোজেন বলেন, ‘যেকোনো দেশের জন্যই লকডাউন বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পরিকল্পনা, যথাযথ প্রয়োগ এবং সঠিক সমন্বয়। এক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটা ভালো সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। আর সেই হিসেবে শুরুতে লকডাউন ঘোষণা না করে স্টেপ বাই স্টেপ ক্লাস্টারভিত্তিক এগুনোটা ভালো। অর্থাৎ অতি সংক্রমিত এলাকায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে লকডাউন দিলে বেশি কার্যকর হয়। তা না করে এভাবে যদি গণপরিবহন খোলা রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তবে সেটি সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
ছবি: সুমিত আহমেদ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম