অধিকাংশই পায়ে হেঁটে যান কারখানায়, ভোগান্তিতে দূরের শ্রমিকরা
৬ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৪৩
ঢাকা: তৈরি পোশাক খাতের ৯০ ভাগ শ্রমিকই কারখানার আশেপাশে থাকেন। তারা পায়ে হেঁটেই কাজে যোগ দেন। কোনো কোনো কারখানা তাদের নিজস্ব পরিবহনে দূরের শ্রমিকদের কারখানায় নিয়ে আসেন। তবে সুপারভাইজর লেভেলের কিছু শ্রমিক গণপরিবহনেই যাতায়াত করেন। হঠাৎ করেই করোনার সংক্রমণে বেড়ে যাওয়ায় সরকার ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে গণপরিবহন। ফলে দূরের শ্রমিকদের জন্য কারখানায় যাতায়াত মুশকিল হয়ে পড়েছে।
যদিও পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, তারা নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন। আবার যেসব শ্রমিক কারখানা থেকে দূরে থাকেন, সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে তাদের জন্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা বলছেন, গণপরিবহন না থাকায় শ্রমিকদের একটি অংশ এখনো ভোগান্তিতে রয়েছেন।
গাজীপুরের পোশক শ্রমিক কাদির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কারখানার সবাই আশেপাশেই থাকেন। আমরা পায়ে হেঁটেই কাজে যাই। তবে বস লেভেলের অনেকেই কারখানার গাড়িতে আসেন। আবার কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করেন।’ আশুলিয়ার একটি কারখানার শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন, ‘অফিসের কাছেই বাসা। তাই পায়ে হেঁটে অফিসে আসি।’ নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার সুপারভাইজার জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘উত্তরা থেকে বাসে করে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে অফিস করি। গণপরিবহন না থাকায় এখন সমস্যায় পড়েছি। সিএনজি বা মোটরসাইকেলে এখন যেতে হচ্ছে।’
পোশাক শ্রমিকদের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক (শ্রম) রেজওয়ান সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানা শতভাগ শ্রমিক দিয়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে বা হোম অফিস করে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব নয়। আর গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেশিরভাগই কারখানার আশেপাশে থাকে। তাই তারা পায়ে হেঁটে কারখানায় আসে। কোনো কোনো কারখানার ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ শ্রমিক যদি আশেপাশে থাকেন, বাকি ২০ ভাগের জন্য ট্রান্সপোর্ট দেওয়া হয়। করোনাকালে আমার কারখানার ২০ শতাংশ শ্রমিকের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি।’
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেশিরভাগই কারখানার আশেপাশে থাকেন। শ্রমিকরা গণপরিবহন বা বাসে যাতায়ত করেন না। কারণ তাদের বেতন কাঠামো অনুযায়ী দূরে থেকে অফিস করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ বেতনের একটি অংশ তখন বাস ভাড়ায় যায়। তাই পোশাক কারখানার ৯০ ভাগ শ্রমিক কারখানার আশেপাশে থাকেন এবং তারা পায়ে হেঁটে কারখানায় আসেন। আর কিছু কারখানা নিজস্ব বাস দিয়ে দূর এলাকা থেকে শ্রমিক এনে কাজ করায়। সেক্ষেত্রে বাস করোনার আগে থেকেই নির্ধারিত। সুপারভাইজর বা এই লেভেলের কিছু শ্রমিক বাসে যাতায়ত করেন। তাদের জন্যে আমরা এখন পরিবহনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কারখানা শতভাগ শ্রমিক দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রথমত: মাস্ক পড়া; কারখানায় সবাই মাস্ক পড়ে ঢুকছে। দ্বিতীয়ত: সবাইকে হাত ধুয়ে কারখানায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। আর তৃতীয়ত: কারখানার ভেতরে মেশিনগুলোর দূরত্ব সাধারণত তিন ফিট। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব থাকছে। আর যারা সুপারভাইজর তারাও যাতে শ্রমিকদের কাছে না যায় সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানা পরিচালিত হচ্ছে।’
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৯৯ ভাগ কারখানার আশেপাশে থাকে, তারা পায়ে হেঁটেই কারখানায় আসে। আর বাকিদের জন্যে ট্রান্সপোর্টর ব্যবস্থা থাকে। আর এখন কোনো কারখানা শতভাগ শ্রমিক দিয়ে চলছে না। কারণ করোনার কারণে অর্ডার নেই। কাজ নেই। কোনো কোনো কারখানা ৬০ থেকে ৮০ ভাগ শ্রমিক দিয়ে চলছে। কারখানাগুলো সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে। সবাই মাস্ক পড়ছে ও হাত ধুয়ে কারখানায় ঢুকছে। কারখানায় স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়মই মেনে চলতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের বেশিরভাগ কারখানার আশেপাশে থাকে, কিন্তু সবাই নয়। কোনো কোনো শ্রমিক ১০ কিলোমিটার দূরেও থাকে। আবার কোনো কারখানার ৪০ ভাগ শ্রমিক কারখানার দূরে থাকে। তাদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। তাদের জন্যে কারখানার মালিকদের নিজস্ব পরিবহন রাখা উচিত। সরকারি বিধিনিষেধের সময় অবশ্যই তাদের জন্যে পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা দরকার।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের কারণে শ্রমিকদের যাতায়াতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেক শ্রমিক কারখানার দূরে থাকেন। তাদের কাজে যোগ দিতে গিয়ে বেগ পোহাতে হচ্ছে। এসব শ্রমিকদের জন্যে পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা উচিত।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম