নতুন এডিপিতে বিদেশি সহায়তা থেকে খরচের লক্ষ্য ৮৯০০০ কোটি টাকা
৬ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৫৮
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অভিঘাত মোকাবিলার বিষয়টি মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের কাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য তথা বৈদেশিক সহায়তা খাতে খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের এ লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
নতুন অর্থবছরে বিদেশি সহায়তার এই লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপি তো বটেই, সংশোধিত এডিপি থেকেও অনেকটা বেশি। ফলে এ লক্ষ্যমাত্রা কতটা অর্জন করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় জানাচ্ছেন অনেকেই। তবে এডিপি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা একটু বাড়িয়ে ধরা হলেও তা অস্বাভাবিক নয়।
বৈদেশিক সাহায্যের বাজেট ও হিসাব (ফাবা) এবং আইসিটি উইংয়ের প্রধান ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, এরই মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা অংশের বরাদ্দ নির্ধারণ করে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই ৮৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় লক্ষ্য পূরণে শঙ্কা রয়েছে। তবে যে আকার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি ঠিকই আছে। কেননা এরই মধ্যে অনেক সংস্থা ও দেশের সঙ্গে বড় বড় প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন চুক্তি হয়েছে। এছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোও চলমান আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে তো অর্থের প্রয়োজন হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। সম্প্রতি তৈরি করা সংশোধিত এডিপিতে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কাঁটছাট করে তা কমিয়ে ৬৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। সে হিসাবে মূল এডিপি’র তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ছে ১৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে সংশোধিত এডিপি’র তুলনায় তা বাড়ছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।
এরই মধ্যে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। সংক্রমণের পাশাপাশি বাড়ছে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। এরই মধ্যে ৫ এপ্রিল থেকে সরকার এক সপ্তাহের জন্য জনচলাচলে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিনিষেধের সময় আরও বাড়তে পারে। ফলে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হবে। তাতে চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও এডিপির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এখনো করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি চলতি অর্থবছরের এডিপি। অর্থাৎ অগ্রগতির দিক থেকে এখনো গত অর্থবছরের সমান অবস্থানে যেতে পারেনি। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর গতি বাড়ানো না গেলে বৈদেশিক সহায়তার এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে বৈদেশিক অর্থের প্রতিশ্রুতি হয়তো বাড়বে। চলতি অর্থবছরেও কিন্তু আইএমএফ ৭৩ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিয়েছে। আগামী অর্থবছরও হয়তো সরকার চাইলে তেমন সহায়তা পাবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। ফলে অর্থ পাওয়া সমস্যা নয়, সমস্যা হলো অর্থছাড় এবং তার বাস্তবায়ন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি নিশ্চিতভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক অর্থবছর ধরেই এডিপির আওতা বৈদেশিক সহায়তার অর্থ বরাদ্দ অনুযায়ী খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। মূল এডিপিতে বৈদেশিক অর্থ খরচের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, অর্থবছরের মাঝপথে এসে সংশোধন করে সেটি কমানো হয়। তারপরও সংশোধিত সেই লক্ষ্যমাত্রাও খরচ করা সম্ভব হয় না।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছিল ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ ধরা হয় ৬২ হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৪৪ কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে ৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে করা হয় ৫১ হাজার কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
এরও আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে মূল বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৮ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয় ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৫২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে চার হাজার ২০৩ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয় ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ২৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বরাদ্দ সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে পাঁচ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয় ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ২৫ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জয়নুল বারি সারাবাংলাকে বলেন, ইআরডি থেকে বৈদেশিক সহায়তা অংশের বরাদ্দ প্রস্তাব আমরা হাতে পেয়েছি। বৈদেশিক সহায়তার অংশটি তারাই দেখে। তারা নিশ্চয় বুঝেশুনেই প্রাক্কলন করেছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এডিপি তৈরির অন্যান্য কার্যক্রমও এগিয়ে চলেছে। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে নতুন এডিপি উপস্থাপন সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
আরএডিপি এডিপি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বৈদেশিক সহায়তা সংশোধিত এডিপি