বেঁচে আছেন, তবু সরকারি ‘কাগজে’ তারা মৃত
৭ এপ্রিল ২০২১ ০৮:১৬
পঞ্চগড়: জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজিম উদ্দিন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৯৯ বছর। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হলেও এখনও দিব্যি হাঁটাচলা করতে পারেন। সম্প্রতি তার বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক, সমাজসেবা অফিস এবং সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ‘কাগজে-কলমে’ বেঁচে নেই, তাই ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!
শুধু আজিম উদ্দীন নন, পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার প্রায় অর্ধশত মানুষের একই অবস্থা। ধরাধামে এখনও তারা জীবিত, করছেন নিয়মিত কাজকর্মও। কেউ বা বার্ধক্য নিয়ে পড়ে রয়েছেন ঘরে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে সার্ভারে তাদের দেখানো হয়েছে মৃত হিসেবে। কেটে দেওয়া হয়েছে তাদের নাম।
সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদফতরে সামাজিক ভাতা ভোগীদের ডাটাবেজ তৈরির জন্য এমআইএস ডাটা এন্ট্রির সময় একের পর এক এমন ঘটনা বের হয়ে আসতে থাকে। জীবিতদের মৃত্যুর খবরে ভুক্তভোগিরাসহ অবাক হয়েছে স্থানীয়রাও। কোনোভাবেই তারা বিষয়টি মেলাতে পারছেন না। এ ঘটনা এখানেই থেমে নেই। সার্ভারে মৃত হিসেবে তাদের পরিচয় কাটা যাওয়ায় অনেকেই নানা দুর্ভোগে পড়েছেন। ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এরইমধ্যে পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার ৩০ জন ভুক্তভোগী মৃতের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের নাম আবারও সার্ভারে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ১২ জন, বোদা উপজেলায় ১৩ জন, আটোয়ারী উপজেলায় ১ জন ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৪ জন রয়েছেন।
এমন ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নিজের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আজিম উদ্দীন। বিস্মিত হন তার স্বজনসহ এলাকার মানুষও। একদিকে ভাতা বন্ধ আরেক দিকে জীবিত থেকেও নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে মৃতের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনে তার মৃতের তথ্যটি সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমি নাকি মৃত, তাই ওরা ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মৃত্যুবরণের আগেই কিভাবে মৃত হলাম বুঝতে পারছি না। আমার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটবে কখনও ভাবিনি। যারা এমনটি করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।’
চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইউপি সদস্য জাকারিয়া আমার কাছ থেকে বয়স্কভাতার কার্ডটি নিয়ে বলে আপনার নাম কাটা গেছে। আপনি মৃত। কথাটা শুনে আমার মাথা ঘুরে গেছে। জীবিত মানুষটাকে মৃত বানালো কে তাকে একটু দেখতে চাই। কারা এমন কাজ করলো তদন্ত করে বের করা হোক।’
একই এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি যদি মৃতই হই তাহলে আবার আমি বয়স্ক ভাতা দাবি করি? এমনিই চলাফেরা করতে পারি না তার ওপর নতুন এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যারা এমনটা করেছে তারা জঘন্যতম অপরাধ করেছে। তাদের খুঁজে বের করে বিচার করা হোক।’
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক অনিরুদ্ধ কুমার রায় বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলায় মোট ভাতাভোগী ৬৬ হাজার ৭৮৫ জন। এসব ভাতাভোগীদের এমআইএস-এ ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। এসময় কিছু ভাতা ভোগীদের তথ্য এন্ট্রি করা যাচ্ছে না। কারণ কারও ভোটার তালিকায় তথ্য গরমিল রয়েছে। জন্মসনদ ও ভোটার তালিকায় দুই রকম তথ্য রয়েছে। আবার কাউকে মৃত দেখানো হয়েছে। যাদের মৃত দেখানো হয়েছে তাদের নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তথ্য সংশোধন করা হলেই ভাতা দেওয়া যাবে।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের সময় ভুলক্রমে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা যাদের আবেদন পাচ্ছি দ্রুত সেটি সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আশা করি শিগগিরই বিষয়টি সংশোধন হয়ে যাবে।’ এছাড়া এই ভুলের জন্য দায়ী কারা সেটিও তদন্ত করে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমও