এবার ‘ডাক্তারগ্রামের’ আরিফুল হবেন ডাক্তার!
৭ এপ্রিল ২০২১ ১৪:১৩
সিরাজগঞ্জ: ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ২৩৩৩তম হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মো. আরিফুল ইসলাম। সে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৃষক মো. আবুল কাশেম ছেলে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে আরিফুল ৭১.২৫ নম্বর পেয়েছে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ফলাফল ঘোষণার পর আরিফুলের পরিবার ও আগনুকালী গ্রাম জুড়ে আনন্দের অশ্রু বইছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাদের সফলতার পথ দেখিয়েছে আরিফুল। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল আরিফুলের নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
আরিফুল জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামের মো. আবুল কাশেম ও রেনু বেগমের ছেলে। ৪ সন্তানের মধ্যে আরিফুল সবার ছোট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার পিতা। পেশায় একজন কৃষক। বাড়িতে রয়েছে একটি টিনের ঘর। সেই ঘরেই পরিবারের সবাই থাকেন। বোন দুইটা বিয়ে হয়েছে। এর আরিফুলের বড় ভাই আবু রায়হান পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ম্যানেজমেন্ট’এ মাস্টার্স করছেন।
আরিফুল ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে আগনুকালী পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৮৩, খাষসাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিএসসি পরীক্ষায় জিপএ-৫ ও ট্যানেলপুলে বৃত্তি পান। এসএসসি’তে জিপিএ-৫ ও রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
আরিফুল ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন।
আরিফুল জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন, আমি তাতেই খুশি থাকতাম। স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করার সময় স্থানীয় সব স্যার বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আর এজন্য সব স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
এ বিষয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে মানবসেবাকারী মামুন বিশ্বাস জানান, আরিফুল আমার গ্রামের ছেলে, খুবই ভাল একজন ছেলে। ছোটবেলা থেকে দেখেছি খুব ভদ্র। তার বাবা অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। আরিফুল পড়াশুনা শেষ করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।
আগনুকালী পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সাবেক প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মাহবুবুল হোসেন (অবসর প্রাপ্ত) বলেন, আরিফুল অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। সে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। সে আমাদের বিদ্যালয়সহ ইউনিয়নবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।
আরিফুল ও তার পরিবার দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। পড়াশুনা শেষ করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন যেন কাজ করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, শাহজাদপুর উপজেলার সর্ব উত্তরের গ্রাম আগনুকালী গ্রামবাসী নিজেদের গ্রামকে শখ করে ডাক্তারগ্রাম বলে পরিচয় দেয়। কারণ এই গ্রামের সন্তান ডা. জসিম উদ্দিন আহম্মদ গত শতকের তিরিশ দশকে কোলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। তখন পূর্ববাংলায় মুসলমান চিকিৎসক ছিলেন হাতে গোনা। তারপর বাংলাদেশ হবার পর এই গ্রাম থেকে প্রায় একডজন ছেলেমেয়ে চিকিৎসক হয়েছেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের অনেক জায়গায়ই তারা সুনামের সঙ্গে মানুষের সেবায় কাজ করছেন।
আরিফ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার জন্য নির্বাচিত হওয়ায় আগনুকালী গ্রামবাসী অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে। উৎসাহভরে বলেছে- আগনুকালী যে ডাক্তার গ্রাম তা আবারও প্রমাণিত হল।
সারাবাংলা/এনএস