মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং চালুর দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ
৭ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৩০
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ‘বিধিনিষেধের’ মধ্যে রাজধানীতে বন্ধ থাকা মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন উবার ও পাঠাওয়ের চালকেরা।
বুধবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভে অংশ নেন মোটরসাইকেল চালকরা। প্রেসক্লাব, বনানী, মহাখালী, মগবাজার, খিলক্ষেত ও মিরপুরে মোটরসাইকেল চালকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত মোটরসাইকেল চালক আব্দুল কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনে বাস চলছে। গণপরিবহন চলছে। মোটরসাইকেলও এখন গণপরিবহন। আমরা অল্প সময়ে যাত্রীদের দ্রুত গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দিচ্ছি। এটি সেবামূলক কাজ। যেহেতু অন্যান্য গণপরিবহন চলছে আমাদেরও চলতে দেওয়া হোক।’
তিনি আর বলেন, ‘রাস্তায় নামলেই পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে। ২ থেকে ৪ হাজার টাকার মামলা দিচ্ছে। আমরা মামলার ভয়ে রাস্তায় নামতে পারছি না। এর আগেও আমরা বিক্ষোভ করে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু সুরাহা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের শহরের রাস্তায় মোটরসাইকেল চলতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক।’
বুধবার বনানীতে মোটরসাইকেল চালকরা বিক্ষোভ করেন বলে জানান একজন রাইডার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বানানীতে বিক্ষোভের কারণে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তায় যানচলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।’
দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী থেকে মগবাজারের রাস্তায় কোনো বাস চলছে না। বাইকারদের দাবি আন্দোলনের কারণে তখন ওই রাস্তায় কোনো বাস আসছিল না।
এদিকে দুপুর ১টার পর মগবাজারে বিক্ষোভ শুরু করে রাইডাররা। তখন সেখানেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে সাত রাস্তা মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয় রাইডাররা। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর পুলিশ আবার ধাওয়া দিলে তারা লাভ রোডের দিতে সরে যায়।
একজন সাধারণ মোটরসাইকেল চালক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (৬ এপ্রিল) অফিসের কাজে বের হয়েছি। সঙ্গে আমার অফিস কলিগ ছিল। কিন্তু পুলিশ মামলা দিতে চাচ্ছিল। তখন আমি বাধা দেই। মেশিনে মামলার তথ্য এন্ট্রি করতে নিয়েছে। তখন বাধা দিয়েছি। পরে আমি গার্মেন্টেসের সব কাগজপত্র দেখিয়ে ছাড় পেয়েছি।’
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকার প্রতিটি মোড়ে দেখা গেছে পুলিশের টহল। মোটরসাইকেল চালকদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে। এসময় বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চালকদের মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘উবার ও পাঠাও চালকরা বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ করেছে। তাদের দাবি, রাজধানীতে গণপরিবহন, সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহন চললেও উবার ও পাঠাও কেন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে এ সিদ্ধান্ত তো সরকারি সিদ্ধান্ত। আমরা শুধু নির্দেশনা পালন করছি। সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে আমরাও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কেউ মোটরসাইকেল চালালে তো আমরা বাধা দিচ্ছি না। কেবল ভাড়া হিসেবে চালালেই তাদের আটকানো হচ্ছে।’
এর আগে, গত ১ এপ্রিল মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবার-পাঠাওয়ের চালকেরা। সেদিনও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখায় চালকরা।
গত ৩১ মার্চ বিআরটিএর উপপরিচালক (প্রকৌশল শাখা) বিমলেন্দু চাকমার সই করা এক অফিস আদেশে জানানো হয়, আগামী দুই সপ্তাহের জন্য মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগামী দুই সপ্তাহ মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন নিষেধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (আপাতত দুই সপ্তাহ) রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
সারাবাংলা/ইউজে/ইএইচটি/এমআই