নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে তোপের মুখে ইমরান
৭ এপ্রিল ২০২১ ২২:৫৫
পাকিস্তানে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার দায় নারীদের পোশাকের ওপর চাপিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলা ‘বিস্ময়কর মূর্খতা’র নামান্তর বলে মনে করছেন তার সমালোচকরা।
ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ওই সাক্ষাৎকারে অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ইমরান খান বলেন, কোনো সমাজে অশ্লীলতা বাড়তে থাকলে পরিণামে ধর্ষণও বাড়ে।
এক সময় ব্রিটেনে ‘প্লেবয়’র জীবন কাটানো এই বিশ্বকাপজয়ী সাবেক পাক ক্রিকেট অধিনায়ক মনে করেন, পাকিস্তানে ধর্ষণের ঘটনা খুব দ্রুত বাড়ছে। তার মতে, পুরুষদের সংযত রাখতে নারীদের উচিত খোলামেলা পোশাক না পরা।
এছাড়াও, নারীদের শরীর ঢেকে চলার উপদেশ দিয়ে ইমরান বলেন, পর্দা ব্যাপারটির মূল কথাই হলো প্রলোভন এড়ানো আর তা এড়ানোর মতো ইচ্ছাশক্তি সবার থাকে না।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ‘তথ্যগতভাবে ভুল, অসংবেদনশীল এবং বিপজ্জনক’ আখ্যায়িত করে পাকিস্তানে শুরু হয়েছে অনলাইনে সই সংগ্রহের অভিযান। সই সংগ্রহ অভিযানের আয়োজকরা মনে করেন, তার এমন মন্তব্য ধর্ষক এবং ধর্ষকবান্ধব ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনও প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই মন্তব্য করারর মধ্য দিয়ে ধর্ষক-নিপীড়কদের রেহাই দিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণ-নিপীড়নের শিকার নারীদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হলো।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা প্রায় নিয়মিত। ২০২০ সালেই এক নারীকে রাতে পেট্রোল পাম্পে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে হয়। নিজের সন্তানদের সামনে ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই নারীকে এক পুলিশ কর্মকর্তা রাতে কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে বের হওয়ার কারণে ভর্ৎসনা করলে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
তবে, নারী এবং নারী অধিকার প্রশ্নে ইমরান খানের অবস্থান আগেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ২০২০ সালে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতিতেই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য নারীদের ‘অপকর্ম’কে দায়ী করেন এক ধর্মীয় নেতা। এমন অবৈজ্ঞানিক মন্তব্যের প্রতিবাদ না করায় তখনও ইমরানের তুমুল সমালোচনা হয়েছিল।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে র্যালি বের করে কট্টরপন্থিদের রোষানলে পড়েন পাকিস্তানের নারীরা। অনলাইনে ভুয়া, বিকৃত ছবি আর ভিডিও ছড়িয়ে শুরু করা হয় অপপ্রচার। র্যালির আয়োজকরা তখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোনো সাড়া পাননি।
সারাবাংলা/একেএম