মেট্রোরেলের অগ্রগতি ৫৭%, ডিসেম্বরে ট্রেন চালু একাংশে
৮ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৪৪
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপের মধ্যেও এগিয়ে চলছে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের কাজ। আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা-আগারগাঁও অংশটি চালুর আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এদিকে জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল পুরো এমআরটি লাইন-৬ এর অগ্রগতি হয়েছে ৫৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সর্বশেষ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত অংশের হাউজহোল্ড সার্ভে এবং সোস্যালও স্টাডি শেষ হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তৈরি করা ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
মেট্রোরেল পরিচালনায় গঠিত ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএন সিদ্দিকী সম্প্রতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আশা এবং প্রচেষ্টা রয়েছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারব। এটি এমন একটি প্রকল্প যেটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে না। এখনও সঠিক পথেই চলছে মেট্রোল প্রকল্পটি।’
সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছে ৫২টি স্থাপনা। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ স্থাপনার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো কাজও ৮০ ভাগ শেষ। এছাড়া ট্রেন পরিচালনার জন্য ১৫’শ ভোল্টের বিদ্যুৎ রিসিভিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকারের ওয়ার্ক স্টেশন। এখানে ট্রেনগুলো চলাচলের পর প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তারপর ক্রুটিমুক্ত করেই ফের চলবে লাইনের ওপর। এই ওয়ার্ক স্টেশনে একসঙ্গে ২৪টি ট্রেন মেইনটেনেন্সের ব্যবস্থা থাকবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পিয়ারের ওপর সর্বশেষ ভয়াডাক্ট স্থাপনও শেষ হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর রেললাইন বসানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে। সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্টেশনগুলোর কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। এদিকে মেট্রো রেলের ছয়টি বগির একটি চালান মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। আরও আসবে ১৩৮টি বগি।
ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
স্টেশনগুলোতে যা যা থাকছে
টিকিট কাউন্টার, বিশ্রামাগার, খাবারের স্বয়ংক্রিয় দোকান, নামাজের জায়গা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট, অপারেশন ও মেইনটেন্সে রুম, বিনাটিকিটে বা টিকিটের অতিরিক্ত গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, উপরে ওঠার সিড়ি, এসকিলেটর (চলন্ত সিড়ি), লিফটসহ নানা আয়োজন থাকছে স্টেশগুলোতে। প্রতিটি স্টেশনে রেলগাড়ি দাঁড়াবে ৪৫ সেকেন্ড।
ট্রেনের ধারণ ক্ষমতা
ট্রেনের এক একটি বগিতে ৫৪ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পিক সময়ে (অফিস যাওয়া ও আসার সময়) বসে এবং দাঁড়িয়ে মিলে মোট ২ হাজার ৩০৮ জন যেতে পারবেন একটি ট্রেনে। স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার ৭৩৮ জন যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতিটি ট্রেনে নারীদের জন্য থাকবে একটি করে বিশেষ বগি। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে প্রতিটি বগির দরজার পাশে হুইল চেয়ার আটকানোর ব্যবস্থাও।
সরেজমিনে মিরপুর-১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এবং আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনার মধ্যেও ব্যাপক কর্মতৎপরতা চলছে। স্টেশনগুলোর কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম