মামুনুল ও হেফাজত ইস্যুতে নীরব থাকবে বিএনপি
৮ এপ্রিল ২০২১ ২০:০৩
ঢাকা: হেফাজতের উত্থানপর্বে ‘আদা-জল’ খেয়ে সমর্থন দিলেও সময়ের পরিক্রমায় ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বিএনপির। ফলে মামুনুল হকের ‘রিসোর্টকাণ্ড’ ও হেফাজতের সঙ্গে সরকারের চলমান দ্বন্দ্বে নীরব থাকবে বিএনপি। যদিও হেফাজতের সাম্প্রতিক তাণ্ডবে বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন এবং অংশগ্রহণ রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের পর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, হেফাজতের এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বা সমর্থক সরাসরি সম্পৃক্ত হবে না। তাদের সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে পোস্ট বা স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকবে সবাই। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতের ডাকা হরতালে বিএনপি সমর্থন জানায়নি।
দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন— পরিস্থিতি যাই হোক, আইন প্রয়োগ করে অথবা কৌশলে হেফাজতকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাবে সরকার। দরকার হলে হেফাজতকে ‘দমন’ করবে অথবা প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বশীভূত করবে। সুতরাং দলের এই সংকটময় মুহূর্তে প্রকাশ্যে হেফাজতকে সমর্থন অথবা সহযোগিতা করে সংকট আরও ঘনীভূত করতে চান না বিএনপি নেতারা। বরং দূরদর্শিতার সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পক্ষে তারা।
এদিকে, ‘রিসোর্টকাণ্ডে’র পর মামুনুল হককে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটি নিয়েও আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলবে না বিএনপি। দলটির বেশিরভাগ নেতা মামুনুল হকের এই কর্মকাণ্ডকে ন্যাক্কারজনক মনে করলেও এর পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়ে সরকার বা হেফাজত— কারোই বিরাগভাজন হতে চান না তারা।
বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ২০১৩ সালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েও হেফাজতকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। বরং সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এখন আবার বিপদে পড়ে বিএনপির সহযোগিতা কামনা করলেও বিপদ কেটে গেলে আবার সরকারের সঙ্গে আঁতাত করতে মোটেই পিছুপা হবে না হেফাজত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, “হেফাজত ইসলামকে সরকার তাদের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করে। সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে হেফাজতের কাছ থেকে ‘কওমি মাতা’ উপাধি লাভ করে, আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করে হয়রানি করতেও দ্বিধা করে না। সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।’
অবশ্য সরাসরি হেফাজতের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নিলেও সরকার ও হেফাজতের মধ্যকার দ্বন্দ্বে দেশে কোনো ‘অরাজক’ পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের ‘বড়’ রাজনৈতিক দল হিসেবে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করবে না বিএনপি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন ও হতাহতের ঘটনা ঘটলে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাজপথের এই প্রধান বিরোধী দল।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ঘটনা যা কিছু ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে, তার সবটুকু সুবিধা নিচ্ছে সরকার। ধর্মপ্রচারের নামে দীর্ঘকাল ধরে তথাকথিত ওয়াজকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে এলেও সে সবের বিরুদ্ধে জোরাল কোনো পদক্ষে নেয়নি সরকার। এখন সবকিছু নিজেদের প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় ‘লোাক দেখানো’ তৎপরতা শুরু করেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্য ও বিরুদ্ধমত প্রকাশ তো নতুন নয়। দীর্ঘকাল ধরে এসব চলে আসছে। কিন্তু সরকার ব্যবস্থাটা নিল কখন? যখন নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় ১৫/২০ জন মানুষ প্রাণ হারালেন, তখন। এসব কিছুর মূলে হচ্ছে নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা, নিষ্কণ্টক করা এবং বিরোধী মতকে দমন করা।’
‘তবে কোনো অরাজকতা বা সহিংসতাকে আমরা সমর্থন করি না। ২৬-২৮ মার্চ মানুষ হত্যার ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
বিএনপি মামুনুল হক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রিসোর্টকাণ্ড হেফাজতে ইসলাম