‘দাঙ্গা-হাঙ্গামায় আপনাদের ব্যবহার করা হচ্ছে, সতর্ক হোন’
৮ এপ্রিল ২০২১ ২০:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা মনিটরিং শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নির্দেশনা না মেনে কওমি মাদরাসা খোলা রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
কওমি মাদরাসার ছাত্রদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘এতিমখানার ছাত্র, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে ইসলামের নাম ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা করছে। দ্বীন ইসলামের প্রতি এ দেশের মানুষের ভক্তি আছে। কওমি মাদরাসার ছাত্র, আমরা সবাই ধর্মপরায়ণ, ধর্মভীরু। সেই ধর্মপরায়ণতাকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করছে। আমি কওমি মাদরাসার ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা সতর্ক হোন। আপনারা বুঝুন যে আপনারা শুধু ব্যবহৃত হচ্ছেন। আপনাদের উসকানি দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুরোধ, আপনারা তাদের বিষয়ে সতর্ক হোন এবং এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকুন।’
আরও পড়ুন- ‘স্বাস্থ্যসেবার সংকট কেটেছে, এ বছর হাহাকার হবে না’
অরাজকতা অব্যাহত রাখলে কওমি মাদরাসার উচ্চতর ডিগ্রির সনদের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে জাতীয়ভাবে সম্মান দিয়ে ইসলামিক স্টাডিজের মাস্টার্সের সমমর্যাদা দিয়েছি। তারপরও যদি কেউ অপরাধমূলক কাজ অব্যাহত রাখে তাহলে আমাদের সেই ডিগ্রির স্বীকৃতি বিবেচনা করে দেখতে হবে। একইসঙ্গে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি, রাজনৈতিক স্বীকৃতিও বিবেচনা করে দেখতে হবে। তারা অর্থনৈতিকভাবে কোন পর্যায়ে আছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে তাদের আমরা নিয়ন্ত্রণ করব।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত অনেকে মানছে না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আবাসিক-অনাবাসিক কওমি মাদরাসা— সব বন্ধ রাখতে হবে। কেবল এতিমখানার বিষয়ে আমরা বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এতিমদের তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এরই মধ্যে পুলিশকে নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে মনিটরিং শুরু হয়েছে। যারা নির্দেশনা না মেনে খোলা রাখবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রামে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমর্থকদের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা নিহতের প্রতিবাদ জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় আমাদের একজন আওয়ামী লীগ নেতা আক্রমণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। খুবই মর্মান্তিকভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করছে এবং তাদের হত্যা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা দেখছি। আশ্বস্ত করতে চাই, কেউ ছাড় পাবে না, কে কত বড় নেতা সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
মামুনুল হক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক কয়েকদিন আগে ভয়ে চট্টগ্রামে আসেননি। আমরা প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলাম, প্রতিবাদ করেছিলাম, উনি ভয়ে চট্টগ্রামে আসেননি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি একজন চরিত্রহীন ব্যক্তি। তিনি মিনিটে একজনকে তার প্রথম স্ত্রী বানান, আরেকজনকে দ্বিতীয় স্ত্রী বানান। মাদরাসার সাধারণ ছাত্র যারা মারা গেল, তারা তো তাদের কর্মী। তাদের কারণেই এসব ছাত্রদের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যেও সে কিভাবে এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতে পারল, সেটা আমরা জানতে চাই। এদের চরিত্র জাতি আজ বুঝতে পেরেছে।’
হেফাজতে ইসলামের সহিংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বরাবর সরব থাকা উপমন্ত্রী নওফেল আরও বলেন, ‘তাদের অপরাধমূলক যে কার্যক্রম, সেটা অবশ্যই প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, কেউ যদি রাজনীতি করতে চায়, তাহলে রাজনীতির মাঠে আসুক, রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু রাজনীতি করবে না, নিজেদের অরাজনৈতিক পরিচয় দেবে, রাজনৈতিক কর্মী না হয়েও আবার রাজনৈতিক দাবি নিয়ে মাঠে নেমে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করবে, মানুষের ভোগান্তির কারণ হবে— এগুলো আমরা মেনে নেব না। সবাই এরই মধ্যে অ্যাকশন দেখেছে, এই অ্যাকশন চলমান থাকবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৭ জন। অন্যদিকে গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ হেফাজত নেতা মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় তার সমর্থকদের মিছিল থেকে হামলায় আহত হয়ে মারা যান এক আওয়ামী লীগ নেতা।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর