সহিংসতা ঠেকাতে প্রয়োজনে ভারি অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ পুলিশকে
৯ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৫০
ঢাকা: গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নাশকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারি-বেসরকারি অফিস, রেলস্টেশন, ভুমি অফিস, প্রেস ক্লাব, সঙ্গীত বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। এমনকি থানায় পর্যন্ত হামলা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে এসব নাশকতা এবং জ্বালাও-পোড়াও ঠেকাতে প্রয়োজনে রাবার বুলেট ছাড়াও ভারি অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশনা দেওয়ার পরই থানায় থানায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে।
এসব নিরাপত্তা চৌকিতে বালুর বস্তা দিয়ে ঘিরে মেশিনগান বসানো হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক একজন পুলিশ সদস্য পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) ও সিলেট জেলা পুলিশের থানাগুলোতে এই বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি দেখা যায়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, বিশেষ নির্দেশনা পেয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে এই নিরাপত্তা চৌকি সবসময় থাকবে। কেউ থানা আক্রমণ করতে আসলে বিশেষ অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনাও রয়েছে আমাদের ওপর।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শুধু থানা নয় বরং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনাতেও এই নিরাপত্তা চৌকি করা হবে।
সিলেট জেলা পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপার সারাবাংলাকে বলেন, সিলেটের সব কটি থানাতেই নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় এরকম নিরাপত্তা চৌকি বসানোর কাজ চলমান রয়েছে।
সিলেটের বাইরে আর কোনো জেলায় বা মেট্রোপলিটন পুলিশে এরকম বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানোর খবর পাওয়া যায়নি। তবে নাশকতা হতে পারে এরকম জেলাগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি রাজধানীতেও এরকম কোনো নিরাপত্তা চৌকি এখনো বসানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ দেশবিরোধী শত্রুরা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াসহ অনেক জায়গায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে তাতে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি ছাড়াও আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। আরেকটা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া যেন না ঘটে, আরেকটা ভুমি অফিস যেন কেউ পোড়াতে না পারে, আরেকটা থানায় যেন আক্রমণ না হয় সেজন্য সবখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ভারি অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশকে সরকার অস্ত্র দিয়েছে সরকারি সম্পত্তি ও মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য। অন্যদিকে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য। অথচ পুলিশ ও থানার ওপর আক্রমণ হচ্ছে তবুও কিছু করছে না পুলিশ। এতে একটি বাহিনীর ব্যর্থতার প্রশ্ন আসে। তাই আইজিপি স্যার বলেছেন পুলিশের ওপর, থানায়, সরকারি অফিসে কেউ নাশকতা করতে আসলে, জ্বালাও-পোড়াও করলে প্রয়োজনে ভারি অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
এর আগে ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের সময় রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানায় এরকম মেশিনগান নিয়ে বালুর বস্তা ফেলে দুর্গ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষদের অনেকেই বলছেন, থানায় মেশিনগান বসানো হলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। ফলে অনেকে থানায় না গিয়ে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কিছু নেই। সেবা প্রত্যাশীরা আগে যেভাবে থানায় গিয়েছিল এখনো সেভাবেই যেতে পারবেন।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা চৌকির বিষয়টি জানি না। তবে খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারবো।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, এরকম নিরাপত্তা চৌকি এখনো করা হয়নি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি করা হবে। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/এসএসএ