Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪ থেকে ২০ এপ্রিলের লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ এপ্রিল ২০২১ ১৫:১০

ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সংক্রান্ত ইঙ্গিত দিলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য প্রযোজ্য হবে এই লকডাউন। এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া আর সবকিছু বন্ধ থাকব।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি জানান, বর্তমান চলমান বিধিনিষেধে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে সরকারকে।

১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে— সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এমন কথা বলেছেন শুক্রবার সকালে। এই লকডাউন কেমন হতে পারে— জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সারাবাংলাকে বলেন, অত্যন্ত কঠোরভাবে লকডাউন হবে। শুধু জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ। সবাই যেন ঘরে থাকে, সবাই যেন লকডাউন পালন করতে সহায়তা করে, সেটি দেখা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছি ২৯ মার্চ থেকে। ওই দিন ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমরা বেশকিছু কড়াকড়ি আরোপ করেছিলাম। এরপর ৪ এপ্রিল আরও কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। আমাদের একটি লক্ষ্য ছিল জনমত তৈরি করা, জনসচেতনতা তৈরি করা। আমরা সেটি করেছি। মানুষ মোটামুটি প্রস্তুত হতে পেরেছে। এখন খুব দ্রুত আমাদের কঠোর লকডাউনে যেতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের হাতে আরও কয়েকদিন সময় আছে। এই কয়েকদিনের মধ্যে বাকি প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হবে। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন চলবে, যে সময়ে সবাই ঘরে থাকবে। কেবল জরুরি সেবা চলবে। কাউকে খুব জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

পোশাক খাতসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা এই লকডাউনে চালু থাকবে কি না— জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা হলো কমপ্লিট লকডাউন। সবাইকে লকডাউনে থাকতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

গত বছর সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী টহল দিয়েছে সারাদেশে। এবারেও সেনাবাহিনী টহল দেবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেটি করলে ভালো হবে, সেটি বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা পরবর্তী সময়ে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষ বুঝতে পেরেছে— করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ কমাতে হলে লকডাউন প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সবাইও এই পরামর্শই দিয়েছেন। সবার চিন্তাভাবনা-পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির বৈঠক থেকে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার আপাতত এক সপ্তাহের জন্যই লকডাউন চালু রাখতে চায় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, আপাতত সাত দিনের জন্যই লকডাউন থাকবে। তারপর প্রয়োজনে আবার (লকডাউন বাড়ানোর) সিদ্ধান্ত আসবে। আর এই সাতটি দিনে যেন সবাই ঘরে থাকেন, সেটি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে। লকডাউন সফল করতে সব মানুষকে সহায়তা করতে হবে।

এর আগে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের একবছর পেরিয়ে এসে গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও করোনায় মৃত্যু। এ পরিস্থিতিতে গত ২৯ মার্চ সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে, যাতে সবাইকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে ৫ এপ্রিল থেকে একসপ্তাহের জন্য সব ধরনের জনসমাগম ও যানচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মোট সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয় সবার জন্য।

তবে এই নির্দেশনায় অফিস-আদালত বন্ধ রাখতে বলা হয়নি, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সীমিত লোকবল নিয়ে অফিস চালাতে বলা হয়। এই বিধিনিষেধ কার্যকরের একদিন পর ৬ এপ্রিল সরকার জানায়, ৭ এপ্রিল থেকে ঢাকাসহ দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে। এ ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা যাবে, মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

এদিকে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, শুক্রবার (আজ) থেকে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে দোকানপাট ও শপিং মল।

১১ সিটিতে গণপরিবহন চালু ও শুক্রবার থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্তের পর বিধিনিষেধ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কেননা, এই দুই সিদ্ধান্তের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ জারির পরই সেই বিধিনিষেধ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা। সরকারের জারি করা বিধিনিষেধকে ‘স্ববিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জরুরি সেবা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ফরহাদ হোসেন লকডাউন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর