নতুন এডিপি: করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতে বৈদেশিক বরাদ্দ বাড়ছে
৯ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩৬
ঢাকা: কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে বাড়ছে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ। আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ৯৯২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা এবং পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে মোট ৮ হাজার ৮৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৮৫৭ কাটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে সবেচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন খাত। এখাতে দেওয়া হচ্ছে ২৪ হাজার ১৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সম্প্রতি খাতভিত্তিক বৈদেশিক সহায়তার বিভাজন চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের পাঠিয়েছে অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ১৭টি খাতে খাতভিত্তিক বরাদ্দ তালিকার একটি কপি এসেছে সারাবাংলার হাতে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এগুলোতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উন্নয়নসহযোগী সংস্থার ঋণ ও অনুদান রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য খাতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারি ঠেকাতে বিভিন্ন উন্নয়নসহযোগী সংস্থা ও দেশ থেকে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা করোনা তহবিল গঠন করেছে। সেখান থেকেও সরকার ঋণ নিতে পারে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর আইএমএফ বাংলাদেশকে ৭৩০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দিয়েছে। আগামী অর্থবছরও যদি সরকার চায় তাহলে পেতে পারে। এভাবে নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ বাড়াটা স্বাভাবিক।’
ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য বা বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যেটি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ১৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দ প্রাক্কলনের জন্য ছয়দিনের সিরিজ বৈঠক করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন এবং গণসংযোগ খাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় কৃষি, শিক্ষা ও ধর্ম এবং পানি সম্পদ সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক হয়।
এ ছাড়া ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, ভৌত-পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক।
১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় জনপ্রশাসন, শিল্প, বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বৈঠক। সর্বশেষ ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় পরিবহণ, তৈল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক।
এ সব বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জুলাই হতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৭ মাসের এডিপি বরাদ্দের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে আগামী অর্থবছরের জন্য খাত ভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কোন খাতে কত বরাদ্দ: পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ইআরডির প্রস্তাব পর্যালোচলা করে দেখা যায়,পরিবহন খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ১৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আগামী এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৪৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার ৩৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে বাড়ছে ৮ হাজার ২৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
অন্যান্য খাতে বৈদশিক সহায়তার বরাদ্দ হচ্ছে, কৃষি খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে ৪ হাজার ১৯৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পানি সম্পদ খাতে ৫৭৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। শিল্প খাতে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তেল গ্যাস ও প্রাকৃতি সম্পদ খাতে ১ হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যোগাযোগ খাতে ৮৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে কোনো বরাদ্দ নেই। গণমাধ্যম খাতে ১৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। জনপ্রশাসন খাতে ৯২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। শ্রম ও জনশক্তি খাতে ১১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/একে