Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজার ও গণপরিবহন থেকে সংক্রমণ বেড়েছে ৬১ শতাংশ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১১

ঢাকা: হঠাৎ করেই দেশে করোনার সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। এর জন্য মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা এবং যাচ্ছেতাই চলাফেরাকে দায়ী করা হচ্ছে। গত ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই সময়ে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে বাজার ও গণপরিবহন থেকে। দেশে এই এক মাস সময়ে ৬১ শতাংশ মানুষ বাজারে গিয়ে বা গণপরিবহন ব্যবহার করে সংক্রমিত হয়েছেন। বিগত সময়ে দেশের পিকনিক স্পট থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ালেও সেটি এখন কমে এসেছে। বর্তমানে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে এক প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশে ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের মাঝে ৬১ শতাংশ বাজার গিয়েছেন। গণপরিবহনও ব্যবহার করেছেন ৬১ শতাংশ মানুষ। উপাসনালয়ে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছে ৩৫ শতাংশ মানুষ। এছাড়াও দেশের ৩২ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তির জনসমাগমে অংশগ্রহণের ইতিহাস আছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের ২৬ শতাংশ রোগীর স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র থেকে সংক্রমিত হয়েছে। ২২ শতাংশ রোগী সংক্রমিত হয়েছে আগেই শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসে। ১৩ শতাংশ রোগীর ইতিহাস থেকে দেখা যায় তারা আন্তঃবিভাগ ভ্রমণ করেছেন। এছাড়াও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন ১২ শতাংশ ও পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে গিয়েছিলেন চার শতাংশ। এছাড়াও তিন শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তির ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ইতিহাস দেখা গেছে। অন্যান্য জনসমাগম স্থানে গিয়ে তিন শতাংশ জনসংখ্যা সংক্রমিত হয়েছে বলা তাদের কেস হিস্ট্রি বলছে।

 

প্রায় সাড়ে আট হাজার রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর’র একটি সূত্র। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে আক্রান্ত রোগীদের যে কন্টাক্ট ট্রেসিং করে থাকে তার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ সময় রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়ে থাকে নিয়মিতভাবে।

প্রতিবেদনটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। এমন অবস্থায় আসলে সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো কিন্তু কাগজে কলমে নিষেধাজ্ঞা বলা হচ্ছে। এটা কিন্তু লকডাউন নয়। বলা হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। এক্ষেত্রে এর প্রভাব বোঝা যাবে আরও কিছুটা সময় পরে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে জীবিকার তাগিদেই। এখানে কিন্তু কোনোভাবেই কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটি করতে পারলে সংক্রমণ কমে আসবে। বাজার ও গণপরিবহণের যে বিষয়টি বলা হচ্ছে সেটি তো খুবই স্বাভাবিক। কারণ যে সময়ের উপরে নির্ভর করে এই প্রতিবেদন সেই সময়েও তো বাজার ছিল একটা বদ্ধ পরিবেশে। আর গণপরিবহনে কার্যত কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে সে বিষয়গুলোতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এখন আরও কিছু সময় পার হলে তখন বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।’

দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ কোথা থেকে বাড়ছে বা কীভাবে বাড়ছে সেটি নিয়ে বিশ্লেষণ করাতো স্বাভাবিক। কিন্তু সব বিশ্লেষণ নিয়ে নানারকম ফলাফল দেখা গেলেও একটি বিষয় কিন্তু সবাইকে মানতে হবে। আর তা হলো মাস্ক পরা। এই একটি কাজ যদি করা হয় তবে অন্তত ৯৬ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যাবে। বাজারে গিয়ে বা গণপরিবহনে উঠেও যদি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে তবে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। সেজন্য বলি, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নাই।’

তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। মাস্ক ছাড়া একজন ব্যক্তিও বাইরে থাকবে না- এটা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার এলাকায় কোনো দোকানদারও মাস্ক পরা ছাড়া কিছু বিক্রি করতে পারবে না। আবার যারা বাজারে ক্রেতা হিসেবে যাবেন তারাও মাস্ক পরা ছাড়া কিছু কিনতে পারবে না। এ সময় তাদের মাঝে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো দোকানে ১০ ফিট জায়গা থাকে তবে সেখানে দুই জনের বেশি ক্রেতাকে প্রবেশ করানো যাবে না। এভাবে যদি বাজার এলাকাগুলোকে উন্মুক্ত স্থানে বসিয়ে পরিকল্পনা করা যায় তবে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে আসে অনেক।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

৬১ শতাংশ আইইডিসিআর গণপরিবহন বাজার সংক্রমণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর