Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানীতে রূপনগর ও আদাবর এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ এপ্রিল ২০২১ ১২:৫৯

ঢাকা: রাজধানীতে বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। বর্তমানে সংক্রমণ হার বিবেচনায় রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এবং মোহাম্মদপুরের আদাবর থানা সবচাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে। এই দুই এলাকায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও ১৭টি থানা এলাকায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে।

শনিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর তথ্য জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৪ হাজার ৩৩২টি টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১০৩ জন অর্থাৎ শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ। উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৩৬ হাজার ৭৭১টি টেস্টের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৪৩ জন, শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে করোনা সংক্রমণের হার সাত শতাংশ বেশি।

এ সব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকায় রূপনগর থানা এবং আদাবর থানা সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ থানা, যাদের করোনা শনাক্তের হার সর্বাধিক। রূপনগরে ৪৬ শতাংশ এবং আদাবরে ৪৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) সহযোগিতায় প্রস্তুত করা প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ঢাকার আরও ১৭টি থানার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপর অবস্থান করছে।

২৩টি থানায় ২০ শতাংশের ওপরে এবং ৭টি থানায় ১১ শতাংশের ওপরে শনাক্তের হার আছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীতে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপরে আছে রূপনগর, আদাবর, শাহ আলী, রামপুরা, তুরাগ, মিরপুর, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, চকবাজার, সবুজবাগ, মতিঝিল, দারুসসালাম, খিলগাঁও এলাকায়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার ২১ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে আছে শাহবাগ, বংশাল, লালবাগ, শাহজাহানপুর, রমনা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, বাড্ডা, বনানী, উত্তরখান, শেরে বাংলা নগর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্লবী, কাফরুল, ডেমরা, ওয়ারী, ভাটারা, দক্ষিণ খান, খিলক্ষেত, কদমতলি, উত্তরা পূর্ব থানা, পল্টন থানা এলাকা।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার ১১ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে আছে তেজগাঁও, উত্তরা পশ্চিম থানা, ভাষানটেক, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং বিমানবন্দর থানা এলাকা।

সদরঘাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনো সংক্রমণ শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা। উৎস ও উৎপত্তিস্থলগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে বর্তমানে সংক্রমণের উর্ধ্বগতি আছে। মার্চ মাস থেকে এটি বাড়ছে। সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুসংখ্যাটাও বাড়ে তবে কমতে থাকে মৃত্যুহার। যেহেতু রোগী বাড়ছে তাই মৃত্যুসংখ্যা বাড়া অস্বাভাবিক না। সরকারর পক্ষ থেকে যে এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেতার ফলাফল পাওয়ার জন্য আমাদের আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে বোঝা যাবে সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে কোনো লাগাম ধরা গেছে কিনা। এক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যার প্রভাব দেখা যাবে তিন সপ্তাহ পরে। বর্তমানে যারা সংক্রমিত হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে যারা গুরুতর তাদের অবস্থা বোঝা যাবে এই সময়ে। এটিও কিন্তু এখন বাড়ছে। আগামী কাল নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন হবে। দেখা যাকে সেখানে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা।

দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মানুষের মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করা। নইলে সংক্রমণের এই উর্ধ্বগতি বাড়তেই থাকবে। আর এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন কী হবে? হাসপাতালে বেড বাড়ানো তো সমাধান না। সমাধান করতে হবে প্রতিরোধের মাধ্যমেই। তা না করে যদি জনসমাগম করা হয় ও স্বাস্থ্যবিধি অবজ্ঞা করা হয়, তবে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য শুনছি ও মিডিয়ায় বলা হচ্ছে সরকার দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু লকডাউন মানে কী, সেটা তো আসলে কেউ বুঝতে পারছে না।এই এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউনের বিষয়ে বলছে মন্ত্রীরা। সেক্ষেত্রে কঠোর লকডাউন মানে কী হতে যাচ্ছে এগুলো সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে জানানো প্রয়োজন। সাহিত্য বা কবিতার ভাষায় কারিগরি কাজ হয় না। এক্ষেত্রে মানুষের কাছে পৌছাতে হবে সঠিক বার্তা যে কী করতে হবে ও কিভাবে করতে হবে। একই সঙ্গে মানুষকে বোঝাতে হবে স্বাস্থ্য বিধি বিষয়ে। মানুষ সেটা মানছে কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে জোরালোভাবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সবাই মাস্ক পরে তবে অন্তত ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। আর তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই ভবে। যার প্রথমটি হলো মাস্ক পরা, দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত দূরত্ব, তারপর হলো হাত ধোয়া। এই তিনটি জিনিস যদি প্রত্যেকেই পালন করে, তাহলে আর কিছুই করতে হবে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা লিমা সারাবাংলাকে বলেন, দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে একমাত্র করণীয় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষ করে মাস্ক পরার অভ্যাসটা চালু করা। কেউ মাস্ক পরে যদি বাইরে যান, তিনি হাঁচি-কাশি দিলেও কিন্তু মাস্ক তার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে। একইসঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে তার কাছ থেকে যেকোনোভাবেই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কমবে।

সারাবাংলা/এসবি/একে

করোনা কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর