Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংক্রমণের ৪০০ দিন: নমুনা পরীক্ষা-সংক্রমণ-মৃত্যুর তথ্য একনজরে

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪৩

ঢাকা: ৮ মার্চ ২০২০। প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয় দেশে। এরপর ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গুনে গুনে পেরিয়ে গেছে ৪০০ দিন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঢাকা থেকে ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। শুরুর কিছুদিন সংক্রমণের হার ছিল বেশ কম। পরে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ২০২০ সালের জুন-জুলাই নাগাদ সংক্রমণ শনাক্তের হার ও পরিমাণ সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ওই সময় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল বেশি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু কমতে থাকে। তবে মার্চ মাস থেকেই আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। এপ্রিলে দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডও দেখা যায়।

২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে পর্যবেক্ষণমূলকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন ঘোষণা করার পরে এদিন ২৬ জন ভ্যাকসিন নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করায় মানুষের মাঝে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে। তবে এটি কিন্তু সংক্রমণ কমাবে না। আর এ কারণে সতর্কতায় ঘাটতি দেখা দিলে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সবধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তারা আরও বলছেন, বর্তমানে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুহারও। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।

করোনা সংক্রমণের ৪০০ দিন

দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হন গত ৮ মার্চ। করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ৫০তম দিনটি ছিল গত ২৬ এপ্রিল। ওইদিন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ৫ হাজার ৪১৬ জন, মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৫। ১৫ জুন একশ দিনের মাথায় সংক্রমণ ছিল ৯০ হাজার ৬১৯ জন, মৃত্যু ছিল ১ হাজার ২০৯।

সংক্রমণের দেড়শ’ দিনের মাথায় (৪ আগস্ট) সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০ জনে। সেদিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২৩৪ জন। এর ৫০ দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর সংক্রমণের ২০০ দিনের মাথায় সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জনে, মৃত্যু ৫ হাজার ৪৪ জনে।

সংক্রমণের ২৫০তম দিন ছিল ১২ নভেম্বর। সেদিন পর্যন্ত শনাক্তের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন, মৃত্যু ৬ হাজার ১৪০ জন। আর ২০২১ সালের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি সংক্রমণের ৩০০ দিনের মাথায় ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৯৯ জন শনাক্ত ও ৭ হাজার ৬৫৬ জনের মৃত্যুর সাক্ষী হয় বাংলাদেশ।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৩৫০ দিন ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৪ জন, মৃত্যু আট হাজার ৩৪২ জন।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৪০০ দিন পূর্ণ হয় ১১ এপ্রিল। এদিন দেশে ২৯ হাজার ২৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচ হাজার ৮১৯ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। একই সময়ে সর্বোচ্চ ৭৮ জন মারা যায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে।

নমুনা পরীক্ষার তথ্য

দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ২১ জানুয়ারি। তবে ৮ মার্চের আগে কেউ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হননি। ওই দিন ৯টি নমুনা পরীক্ষা করে তিনজনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর প্রথমবার ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা ১০০ অতিক্রম করে ২৬ মার্চ। ওই দিন ১২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দিনে হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা প্রথম করা হয় ১০ এপ্রিল। ওইদিন এক হাজার ১৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।

নমুনা পরীক্ষা বাড়তে বাড়তে একদিনে পাঁচ হাজার পরীক্ষার ঘর স্পর্শ করে ১ মে। ওইদিন ৫ হাজার ৫৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। একদিনে ১০ হাজার পরীক্ষার ঘরও স্পর্শ হয় ওই মাসেই। ২০ মে ১০ হাজার ২০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরপর ১০ জুন পরীক্ষা করা হয়েছিল সে পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৫টি নমুনা। আর গত ১৫ ডিসেম্বর পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ৫৪টি। ৩০০ দিন তথা ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ৭০১টি।

 

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৩৫০ দিন ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। এদিন পর্যন্ত দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয় ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৭টি। সেদিন পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৪ জন, মৃত্যু আট হাজার ৩৪২ জন।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৪০০ দিন হয় ১১ এপ্রিল। এ দিন দেশে মোট ২৯ হাজার ২৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ দিন পর্যন্ত দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হয় ৫০ লাখ দুই হাজার ৭৮৭। এদিন পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হয় ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জন, মৃত্যু ৯ হাজার ৭৩৯ জন।

করোনা সংক্রমণ শনাক্ত সংক্রান্ত তথ্য

গত ২১ জানুয়ারিতে দেশে নমুনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে প্রথমবারের মতো সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর আগ পর্যন্ত ১১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির দেখা মেলেনি। ৮ মার্চ জানা যায়, ইতালি ফেরত দুজন এবং তাদের একজনের পরিবারের আরেক সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

এরপর ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে আর কেউ শনাক্ত না হলেও ১৫ মার্চ শনাক্ত হন দুজন। ১৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ১৪ দিনের মধ্যে আরও তিনদিন কোনো ব্যক্তি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হননি। এরপর আর কখনোই শূন্য সংক্রমণ দেখা যায়নি বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৫ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৮ জন। সেদিনই প্রথম দুই অংকে পৌঁছায় শনাক্তের সংখ্যা। ৯ এপ্রিল ১১২ জন শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একদিনে সংক্রমণ শতকের ঘরে পৌঁছায়। ওই মাসেই ২৪ এপ্রিল তা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ’র ঘর।

একদিনে প্রথম হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১১ মে (এক হাজার ৩৪ জন)। ওই মাসেই ২৮ মে সংক্রমণ ছাড়াই একদিনে দুই হাজারের ঘর (দুই হাজার ২৯ জন)। সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে তিন হাজারের ঘর স্পর্শ করে ৯ জুন। সেদিন তিন হাজার ১৭১ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। সংক্রমণ চার হাজারের ঘরও ছাড়ায় জুন মানেই। ১৭ জুন চার হাজার আটজন শনাক্ত হয়েছিলেন দেশে। এটি ছিল ২০২০ সালে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা।

২০২১ সালের ২৯ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো ৫১৮১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১ এপ্রিল দেশে ছয় হাজার ৪৬৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম বারের মতো সাত হাজারের উপরে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৪ এপ্রিল (৭ হাজার ৮৭)। দেশে ৭ এপ্রিল সাত হাজার ৬২৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এটি ৪০০ দিনে দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা।

করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু

দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ ‍মার্চ। সেদিন একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে। মৃত্যুর সংখ্যা ৫০-এর ঘর স্পর্শ করে ১৫ এপ্রিল। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ অতিক্রম করে ২৫ মে। আর ১০ জুন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যায় হাজারের ঘর। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ আগস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ৪ নভেম্বর ৬ হাজার ও ১২ ডিসেম্বর করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৭ হাজার মৃত্যু পেরিয়ে যায় দেশে।

অন্যদিকে দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রথমবারের মতো ১০ জন মারা যান ১৬ এপ্রিল। একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ২০-এর ঘর পেরিয়ে যায় ১৮ মে, সেদিন ২১ জন মারা গিয়েছিলেন। ৩০ মে পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮। তবে ৩১ মে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ৪০ জন। আর ১৬ জুন একদিনে মৃত্যু ৫০-এর ঘরও ছাড়িয়ে যায়। ৩০ জুন মৃত্যু পেরিয়ে যায় ৬০-এর ঘরও। সেদিন ৬৪ জন মারা গিয়েছিলেন। এটি ২০২০ সালে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল।

দেশে মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙে ৬ এপ্রিল। এ দিন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হইয়ে মারা যায় ৬৬ জন। পরবর্তী সময়ে ১১ এপ্রিল অর্থাৎ ঠিক ৪০০ দিনের সময় ৭৮ জন মারা যায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে, যা দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা।

মাসভিত্তিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা

৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর এ মাসের শেষদিন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১ হাজার ৬০২টি। তখন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৫১ জনের মধ্যে। এরপর এপ্রিলে সাত হাজার ৬১৬ জন, মে মাসে ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন, জুনে ৯৮ হাজার ৩৩০ জন, জুলাইয়ে ৯২ হাজার ১৭৮ জন, আগস্টে ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন, সেপ্টেম্বরে ৫০ হাজার ৪৮৩ জন, অক্টোবরে ৪৪ হাজার ২০৫ জন, নভেম্বরে ৫৭ হাজার ২৪৮ জন এবং ডিসেম্বরে ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হন।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ২১ হাজার ৬২৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৭৭ জনের মাঝে। মার্চে এসে ৬৫ হাজার ৭৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এপ্রিলের প্রথম ১১ দিনে দেশে ৭৩ হাজার ৪৬১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

মাসভিত্তিক করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু

১৮ মার্চ প্রথম করোনা নিয়ে মৃত্যুর পর ওই মাসে আরও চারজন মারা যান। এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয় ১৬৩ জনের। মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে এক হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে এক হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে এক হাজার ১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন এবং ডিসেম্বরে ৯১৫ জন মারা যান এই ভাইরাসের সংক্রমণে।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে ৫৬৮ জন মৃত্যুবরণ করেন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ২৮১ জন মারা যান কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। মার্চ মাসে দেশে ৬৩৮ জন মারা যান কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। এপ্রিল মাসের প্রথম ১১ দিনে দেশে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৬৯৩ জন।

মাসভিত্তিক করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার

২০২০ সালের মার্চে করোনা নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এপ্রিলে সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ১২ শতাংশ, মে মাসে ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ ও জুন মাসে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সংক্রমণের হার সর্বোচ্চে পৌঁছায় জুলাই মাসে। ওই মাসে সংক্রমণের হার ছিল ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর আগস্ট মাসে সংক্রমণের হার ছিল কিছুটা কম— ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সংক্রমণের হার অনেকটা কমে এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৭০ শতাংশে। এরপর অক্টোবরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, নভেম্বরে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ ও ডিসেম্বরে সংক্রমণ ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৮২ শতাংশ। মার্চ মাসে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার হয় ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এপ্রিল মাসের প্রথম ১১ দিনে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২২ দশমিক ১১ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

দেশে ২০২১ সালের মার্চ মাসের পরে সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে। একইসঙ্গে জোর দিতে হবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ। উৎস ও উৎপত্তিস্থলগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি আছে। মার্চ মাস থেকে এটি বাড়ছে। সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুসংখ্যাটাও বাড়ে। তবে কমতে থাকে মৃত্যুহার। যেহেতু রোগী বাড়ছে তাই মৃত্যুসংখ্যা বাড়া অস্বাভাবিক না। সরকারর পক্ষ থেকে যে এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার ফলাফল পাওয়ার জন্য আমাদের আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে বোঝা যাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে কোনো লাগাম ধরা গেছে কি না। এক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যার প্রভাব দেখা যাবে তিন সপ্তাহ পরে। বর্তমানে যারা সংক্রমিত হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে যারা গুরুতর তাদের অবস্থা বোঝা যাবে এই সময়ে। এটিও কিন্তু এখন বাড়ছে। আগামীকাল নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন হবে। দেখা যাকে সেখানে কোনো প্রভাব পড়ে কি না।’

দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মানুষের মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করা। নইলে সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি বাড়তেই থাকবে। আর এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন কী হবে? হাসপাতালে বেড বাড়ানো তো সমাধান না। সমাধান করতে হবে প্রতিরোধের মাধ্যমেই। তা না করে যদি জনসমাগম করা হয় ও স্বাস্থ্যবিধি অবজ্ঞা করা হয়, তবে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য শুনছি ও মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, সরকার দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু লকডাউন মানে কী, সেটা তো আসলে কেউ বুঝতে পারছে না। এই এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউনের বিষয়ে বলছেন মন্ত্রীরা। সেক্ষেত্রে কঠোর লকডাউন মানে কী- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে জানানো প্রয়োজন। সাহিত্য বা কবিতার ভাষায় কারিগরি কাজ হয় না। এক্ষেত্রে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে সঠিক বার্তা। কী করতে হবে ও কীভাবে করতে হবে। সেইসঙ্গে মানুষকে বোঝাতে হবে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে। মানুষ সেটা মানছে কি না তাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে জোরালোভাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সবাই মাস্ক পরে তবে অন্তত ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই ভবে। যার প্রথমটি হলো মাস্ক পরা, দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত দূরত্ব, তারপর হলো হাত ধোয়া। এই তিনটি জিনিস যদি প্রত্যেকেই পালন করে, তাহলে আর কিছুই করতে হবে না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা লিমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে একমাত্র করণীয় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষ করে মাস্ক পরার অভ্যাসটা চালু করা। কেউ মাস্ক পরে যদি বাইরে যান, তিনি হাঁচি-কাশি দিলেও কিন্তু মাস্ক তার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে। সেইসঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে তার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা কমবে।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

৪০০ দিন করোনা সংক্রমণ মৃত্যু শনাক্ত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর