জবিতে ছাত্রলীগের ‘দুই গ্রুপের মধ্যে’ টেন্ডার নিয়ে হাতাহাতি
১২ এপ্রিল ২০২১ ১১:৫৮
ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের ২০০ একর জমির বাউন্ডারি ওয়ালের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ই-টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ দিনে জবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে টেন্ডার নিয়ে হাতাহাতি, বাক-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
এই টেন্ডারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফরাজির নেতৃত্বে গত সপ্তাহ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দফতরে ঘোরাঘুরি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কয়েক দফা দেখা করার চেষ্টাও করেন। রোববারও (১১ এপ্রিল) এসেছিলেন ক্যাম্পাসে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলায় এসে কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।
এ দিকে গত সপ্তাহ থেকে টেন্ডারের জন্য ঘোরাঘুরি করা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমিন শেখ, যুগ্ম সাধারণ হোসনে মোবারক রিশাদ, নাজমুল ইসলাম সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, আকতার হোসেন, সাবেক দফতর সম্পাদক শাহবাজ হোসেন বর্ষণ ও সহ সম্পাদক রিফাত সাঈদ কর্মীদের নিয়ে রোববার (১১ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী কক্ষে যান।
এর কিছু সময় পরেই ছাত্রলীগের আশরাফুল, ইব্রাহিম ও জামালের কর্মীরা প্রকৌশলীর দফতরে প্রবেশ করেন। তারা ছাত্রলীগের জবি শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম টিটন, ইব্রাহিম ফরাজি ও জামাল উদ্দিনের কর্মী বলে পরিচিত। প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে প্রবেশের পরপরই দুই গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডা শুরু হলে প্রক্টরিয়াল বডি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
বিষয়টি নিয়ে হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, ‘কল দিয়ে কয়েকজন ছাত্র আমার সঙ্গে আজ দেখা করতে চায়। আমি আমাদের টেন্ডারের মিটিং শেষ করে বেলা ১২টার দিকে রুমে এলেও তারাও ছাত্রলীগের সাত আটজন আমার রুমে প্রবেশ করে। এ সময় তারা নিজেদেরকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদের নেতা বলে পরিচয় দেয় এবং টেন্ডারের বিষয়ে কথা বলে। তারা বলে যে টেন্ডার হলে আমাদের দিকে একটু খেয়াল রাখিয়েন।’
‘আমি বলেছি এখনও অনেক কাজ বাকি এটা নিয়ে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তার পর জানা যাবে কাজ কে পেয়েছে। সুতরাং এটা নিয়ে এখনই কিছু করা বা জানানোর সময় হয়নি। এ সময় ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ সংখ্যায় এদের চেয়েও বেশি হবে, তারা বলে স্যার এক গ্রুপ নিয়ে মিটিং করলে হবে আমরাও তো আছি। তখনই নিজেদের মধ্যে টেন্ডার নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু করেলে একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আমি তাদের বের হয়ে যেতে বলি। এ সময় তাদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করে।’
এ বিষয়ে সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিশাদ বলেন, ‘করোনার জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই সকালের দিকে আমরা কয়েকজন মিলে ক্যাম্পাসে যাই। বিভিন্ন দফতরে আমাদের পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করি। বেলা ১২টার দিকে প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে কথা বলার সময় আশরাফুল, ইব্রাহিম ও জামালের গ্রুপের কর্মীরা হুট করে রুমে আসে। এ সময় টেন্ডারের কথা বলে আমাদের সঙ্গে হট্টগোল শুরু করে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি গত পরশুদিন ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীদের একটি অংশ ক্যম্পাসে মাস্ক বিতরণ করেছে সিনিয়রদের না জানিয়ে। তারাই আজ আবার ক্যাম্পাসে গেলে জুনিয়ররা তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয় পরে প্রক্টর অফিসের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
জবির ২০০ একর জমির বাউন্ডারি ওয়ালের ই-টেন্ডার জমার কোনো বিষয় আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই তবে থাকতেও পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে হট্টগোল করছে জেনে আমরা দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উভয়পক্ষকে বলেছি, শান্ত থাকতে। ক্যাম্পাসে কেউ এ নিয়ে ঝামেলা করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন ‘ছাত্রলীগে কোনো টেন্ডারবাজের জায়গা নেই। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/জেআর/একে