কোভ্যাক্সের ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসছে মে মাসে
১২ এপ্রিল ২০২১ ১৭:১৪
ঢাকা: করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়ার সুখবর দিল বিশ্বব্যাংক। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ৬ দশমিক ৮ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাবে। সোমবার (১২ এপ্রিল) সকালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশে শিগগিরই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে যদি চলমান ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, কঠোর লকডাউন কার্যকর হয় এবং দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় তাহলেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাসিং মিয়াং টেম্বন। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র ইকোনমিস্ট বানার্ড হ্যাভেন।
মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে বৈশ্বিকভাবে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন খুব শিগগিরই পাবে। বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাকসিন কিনতে অর্থের কোনো সমস্যা নেই। বিশ্বব্যাংকও ৫০ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে, যা দিয়ে দেশের তিন ভাগ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন কেনা যাবে। বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স’র সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও রয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারত থেকে ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে। আরও আড়াই কোটি ডোজ কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি রফতানি, শক্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং চলমান ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির কারণে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রবৃদ্ধির গতি কমে গিয়েছিল। এতে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতা বিপরীত হয়ে যায়। তবে আশার কথা হলো, অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে কারখানাগুলো ফের খোলা হয়েছিল। ফলে রফতানিও ফের শুরু হয়। তবে চলমান কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি উচ্চতর ঝুঁকির মুখোমুখি।
বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে তৈরি অনিশ্চয়তার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। তবে পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে দ্রুত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায়। প্রতিবেদনের আরও বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দেরি হলে আরএমজি পণ্যগুলোর চাহিদা কমতে পারে। এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সীমাবদ্ধ হতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারিটি আর্থিক খাতের ঝুঁকিকে আরও তীব্রতর করেছে। খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংক পরিচালনা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। তাই সরবরাহ কর্মক্ষমতা উন্নত করার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার গতি এবং প্রতিযোগিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
প্রতিবেদনে ব্যবসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে লজিস্টিক সিস্টেমকে আধুনিকীকরণের সুযোগগুলোর রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। লজিস্টিক দক্ষতা বাড়াতে সিস্টেম বা কৌশলের মাধ্যমে এটি অর্জন করা যেতে পারে। অবকাঠামোর মান, ক্ষমতা ও পরিচালনা উন্নতি, সরবরাহ পরিষেবার মান বৃদ্ধি ও সংহতকরণ উন্নত করা এবং আঞ্চলিক সরবরাহ পরিষেবাগুলোর বিরামবিহীন সংহত অর্জন জরুরি।
এদিকে বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, ‘কোভিড -১৯ মহামারিটি চরম বৈশ্বিক মন্দা তৈরি করেছে। মহামারি দ্বারা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি। সেইসঙ্গে কাঠামোগত সংস্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করতে পারে।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম