Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা মুক্তির প্রার্থনা, হ্রদের জলে ভাসল মঙ্গল কামনার ফুল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২১ ২২:৪২

রাঙ্গামাটি: প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সীমিত পরিসরে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। করোনা সংকটের মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর, নগর আর পাহাড়িপল্লীগুলো। পানিতে ফুল ভাসিয়ে বৈশ্বিক মহামারি থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর নিকট প্রার্থনা করা করেন সকলে।

বিজ্ঞাপন

২৯ চৈত্র সোমবার (১২ এপ্রিল) চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে ‘সূচিকাজ’। ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এইদিন প্রায় সকল পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেয়। এদিকে সোমবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুলবিজু উপলক্ষে শহরের রাজবাড়ীঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায়া নিজ নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পানিতে ফুল ভাসানো হয়। তবে এবারও আনুষ্ঠানিকতা উৎসব স্থগিত করেছে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, সাংক্রান ও বিষু উদযাপন কমিটি।

বিজ্ঞাপন

উৎসবপ্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায়ের এই উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন না হলেও এবছর সীমিত পরিসরে ব্যক্তি উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসিয়ে ফুল বিজু উৎসব পালন করা হয়।

পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনা’ই যেন ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালায় পাহাড়ের মানুষ। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানায় ফুল ভাসাতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।

শহরের রাজবাড়ীঘাটে ফুল ভাসিয়ে অমর কুমার চাকমা জানান, এটি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ঐহিত্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব। করোনার কারণে গত বছর উৎসবটি সেভাবে হয়নি। এবার নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিশ্ব যেন করোনা মুক্তি পায় সেই প্রার্থনা করা হয় মা গঙ্গা দেবীর কাছে। আমরা যেন আগামী বছর সুন্দর করে পূর্বের ন্যায় উৎসবটি পালন করতে পারি।

ঐশি চাকমা বলেন, সকালে ঘর সাজিয়ে এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাকে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন আরও অনেক সুন্দর হয়। করোনা থেকে দ্রুত বিশ্ব মুক্ত হউক। আমরা সবাই আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি সেই কামনা।

বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, সাংক্রান, বিষু (বৈসাবি) উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, গত বছর করোনার কারণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হলেও হঠাৎ করোনা বৃদ্ধি পাওয়া সব আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছে। যে যার মত বাড়ি আসে পাশে হ্রদের জলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুল ভাসিয়েছে।

প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠীর মানুষ সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষুসহ কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে। বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়।

সারাবাংলা/এনএস

করোনাভাইরাস কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানো বৈসাবি উৎসব

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর