বিমায় বেতন বৈষম্য: একই পদে কেউ পান ১১ লাখ, কেউ ১ লাখ!
১৩ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪৫
ঢাকা: বিমা করে গ্রাহক যথাসময়ে পলিসির টাকা না পেলেও কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (এমডি) বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কমতি নেই। প্রতিবছরই বাড়ছে এমডিদের সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু সেভাবে বাড়ছে না কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা। বর্তমানে ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ বেতন নিচ্ছেন গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের এমডি ফারজানা চৌধুরী। তিনি প্রতি মাসে কোম্পানিটি থেকে বেতন নেন ১১ লাখ টাকা। আর সবচেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের এমডি সুকুমার চন্দ্র সাহা। তিনি কোম্পানিটি থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা বেতন নেন।
এছাড়াও বিভিন্ন বিমা কোম্পানির এমডি বেতনের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক একাধিক গাড়ি সুবিধা, বিভিন্ন ভাতা এবং আবাসন সুবিধাসহ প্রতি মাসে বেতনের সমপরিমাণ অনান্য সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন। দেশের বিভিন্ন সাধারণ বিমা কোম্পানির এমডিদের বেতন ভাতার তথ্য পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৭৯টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি জীবন বিমা কোম্পানি এবং ৪৬টি সাধারণ বিমা। জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে একটি সরকারি এবং ৩২টি বেসরকারি। আর সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে একটি সরকারি এবং ৪৫টি বেসরকারি।
বিমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাসমূহ সম্পর্কে বলা আছে, বিমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, কাজের পরিধি, ব্যবসার পরিমাণ এবং উপার্জন ক্ষমতা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্যতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা এবং সমমানের বিমা কোম্পানিতে অনুরূপ পদে বহাল ব্যক্তিকে প্রদত্ত পারিতোষিকের পরিমাণ বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান কিংবা পরিচালকের পরিবারের কোনো সদস্য এমডি হলে তার বেতন অন্য যেকোনো কোম্পানরি এমডির চেয়ে অনেক বেশি হয়।
এছাড়াও বিমা আইনে বলা আছে, মোট বেতন, মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য ভাতাদি (ভবিষ্যৎ তহবিল, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি) সমন্বয়ে গঠিত হবে। অন্যান্য সুবিধাদি যেমন- গাড়ি, জ্বালালি, চালক, ইউটিলিটি বিল, ছুটি, পরিবহন সহায়তা, ইত্যাদির পরিমাণ বা সীমা নির্দিষ্ট থাকতে হবে এবং অন্যান্য সুবিধাসমূহ যতদূর সম্ভব আর্থিক মানদণ্ডে নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। আবার কোম্পানির এমডিদের বেতনের সঙ্গে অনান্য কর্মকর্তাদের বেতনের কোনো সামঞ্জস্য নেই।
সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের অর্থউপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমা কোম্পানির এমডিদের এত বেশি বেতন নেওয়া কোনভাবেই ঠিক না। দেখা যাচ্ছে, অনেকে বিমা কোম্পানি ঠিকমতো গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু কোম্পানির এমডিরা ১০/১২ লাখ টাকা বেতন নিচ্ছেন কিভাবে? এসব বিষয় আইডিআরএ‘র খতিয়ে দেখা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের আত্নীয়-স্বজন ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি হলে তারা যাতে মালিকপক্ষের আনুকূল্যে বেশি বেতন নিতে না পারেন সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে এমডিদের বেতনের সিলিং করে দেওয়া যেতে পারে। কারণ বেশিরভাগ বিমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। তাই শেয়ারহোল্ডাররা যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ‘র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. শাকিল আখতার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমা কোম্পানির এমডিদের বেতন ১০/১২ লাখ টাকা হলে প্রয়োজনে তা সামঞ্জস্য করা হবে। কারণ কোনো কোনো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইডিআরএ‘র নির্ধারিত সীমার চেয়েও অনেক বেশি হচ্ছে। সেগুলো কমিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিমা কোম্পানির মালিকপক্ষের আত্নীয়-স্বজন এমডি হয়ে যদি বেশি বেতন নিয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো খতিয়ে দেখে সামঞ্জস্য করা হবে।’
সাধারণ বিমা কোম্পানির কোন এমডির বেতন কত
সাধারণ বিমার মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে সবচেয়ে বেশি বেতন নিচ্ছেন গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ফারজানা চৌধুরী। তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ মে থেকে তৃতীয় দফায় কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ১১ লাখ টাকা বেতনে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি কোম্পানিটির অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক এবং সাবেক এমডি নাসির এ চৌধুরীর মেয়ে।
বিমা খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন পাচ্ছেন রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. খালেদ মামুন। তিনি কোম্পানিটি থেকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন নিচ্ছেন। এছাড়াও অপর সাধারণ বিমা কোম্পানি বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহমেদ সাইফুদ্দিন চৌধুরীর বেতন সাত লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য তিনি কোম্পানিটির এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের ১৬ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি মো. রেজাউল করিম বেতন পাচ্ছেন ৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি মো. আব্দুল মতিন ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কোম্পানি থেকে মাসে ৪ লাখ টাকা বেতন নিচ্ছেন। নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি এসএম মাহবুবুবর করিমের বেতনও চার লাখ টাকা। ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি কে মনোয়ার নাদিম ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের এমডি এএমএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। এছাড়া প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি মোহাম্মদী খানম পাচ্ছেন ৩ লাখ টাকা ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের এমডি বায়েজীদ মুজতবা সিদ্দিকী ২ রাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম
এমডির বেতন জীবন বিমা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বৈষম্য সাধারণ বিমা